ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) বর্ষীয়ান কমান্ডার আলী আকবর আহমদিয়ানকে দেশটির নতুন নিরাপত্তাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সোমবার ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এসএনএসসি) সেক্রেটারি পদে ৬২ বছর বয়সী আলী আকবর নিয়োগ পান। প্রায় এক দশক ধরে এই পদে থাকা আলী শামখানির স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি।
আলী আকবর এমন এক সময়ে এসএনএসসির দায়িত্ব নিলেন যখন তাঁর পূর্বসূরি মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক বিরোধ মেটাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গতিশীল করছিলেন। এরই অংশ হিসেবে গত মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় বৈরী সম্পর্কের দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে ইরান। তবে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক এখনো তিক্ত। ২০১৫ সালে পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত পাঁচ দেশের সঙ্গে ইরানের যে যুগান্তকারী পারমাণবিক চুক্তি হয়েছিল, সেটি এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। এদিকে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করছে তেহরান। এ ছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে এক কুর্দি তরুণীর মৃত্যুর পর দেশজুড়ে বিক্ষোভের জেরে দেশের ভেতরও উত্তেজনা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
এক দশক ধরে রাজনীতি আর সমরনীতি দুটোই একসঙ্গে সামলেছেন আলী আকবরের উত্তরসূরি শামখানি। তবে আলী আকবর ব্যতিক্রম। তিনি পুরোদস্তুর সামরিক ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রেসিডেন্টর প্রশাসন অথবা কূটনৈতিক হিসেবে কাজ করেছেন এমন কোনো তথ্য জানা যায় না। ইরানের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর শাসনামলে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা সর্বশেষ ব্যক্তি ছিলেন আলী শামখানি। একজন পেশাদার সৈনিক শামখানির কর্মজীবনে সংস্কারপন্থী, মধ্যপন্থী ও রক্ষণশীল সরকারের সময় দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে। অন্যদিকে আলী আকবর তাঁর সামরিক জীবনের পুরোটা সময় আইআরজিসিতে কর্মরত ছিলেন।
গত শতকের আশির দশকে আট বছরের ইরাক-ইরান যুদ্ধে অবদান রেখে অভিজাত বাহিনী হিসেবে পরিচিত আইআরজিসিতে কাজের নৈপুণ্যে এগিয়ে গেছেন আলী আকবর। ইরানের একাধিক প্রদেশে আইআরজিসির সদর দপ্তরে নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন পদেও ছিলেন তিনি।ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো আলী আকবরকে আইআরজিসির নৌ শাখার আধুনিকায়নের স্থপতিদের একজন হিসেবে বর্ণনা করছে। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে আইআরজিসির নৌ শাখার প্রধান কমান্ডারের দায়িত্ব পান আলী আকবর। এর আগে তিনি আলী শামখানির সহকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
পরে আইআরজিসির জয়েন্ট স্টাফ হিসেবে পদোন্নতি পান আলী আকবর। ২০০০-০৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। এই পদে থাকার শেষ দুই বছরে তিনি আইআরজিসি পরিচালিত ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়েরও পরিচালক ছিলেন।২০০৭ সাল থেকে গত রোববার পর্যন্ত আলী আকবর আইআরজিসির স্ট্র্যাটেজিক সেন্টারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই পদে থাকার সময় তিনি ইরানের নিরাপত্তা ও সামরিক নীতিনির্ধারণে প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি হিসেবে উঠে আসেন। একই সঙ্গে আইআরজিসির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিরও নেতৃত্ব দেন আলী আকবর।
এক বছরের কম সময় আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দেশটির প্রভাবশালী এক্সপেডিয়েন্সি কাউন্সিলে পাঁচজন নতুন সদস্য নিয়োগ দেন। তাঁদের একজন ছিলেন আলী আকবর। আইআরজিসির প্রয়াত কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ও আলী আকবরের জন্ম একই প্রদেশে অর্থাৎ কেরমানে। কাসেম সোলাইমানি ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর দেশটির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো সমরজগতে বিশেষ পরিচিত ছিল তাঁর। ২০২০ সালে ইরাকের বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হন তিনি।
ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে কৌশলগত ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি আছে আলী আকবরের। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিরক্ষায় স্নাতকোত্তর করেছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post