বিদেশগামী মহিলা গৃহকর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র এখন থেকে শতভাগ অনলাইনে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালককে (দায়িত্বশীল কর্মকর্তা) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা সংক্রান্ত একটি চিঠি গত সপ্তাহে পাঠানো হয়েছে। মহিলা গৃহকর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে বিগত সময়ে এজেন্সিগুলোর সাথে কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতির করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে স্বচ্ছ ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবার মহিলা গৃহকর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র শতভাগ অনলাইনে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জনশক্তি প্রেরণকারী ব্যবসায়ী ও অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন মহিলা গৃহকর্মীদের শতভাগ অনলাইনে বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার কার্যক্রম শুরু হলে অফিসের কার্যক্রমে যেমন গতি আসবে তেমনি এর সুফলও দ্রুত পাবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। বন্ধ হতে পারে অনিয়ম ও দুর্নীতি।
তবে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ প্রশ্ন রেখে বলছেন, এরপরও যেসব মহিলা গৃহকর্মী অনলাইনে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পর নিয়োগকর্তার অবহেলা ও নির্যাতনের কারণে নানাবিধ সমস্যায় পড়বেন তাদের সমস্যা থেকে উত্তরণে দূতাবাস কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে সেটিও এজেন্সিগুলোকে জানানো উচিত ছিল বলে মনে করছেন তারা। গতকাল শুক্রবার রাত ৮টায় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহিদুল আলমের সাথে এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি।
বিদেশগামী গৃহকর্মীদের অভিবাসন ছাড়পত্র প্রদান প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা প্রসঙ্গে গত ৯ মে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গাজী মো: শাহেদ আনোয়ার স্বাক্ষরিত চিঠি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) মোহাম্মদ আব্দুল হাইয়ের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, উপযুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ ও গতিশীল অভিবাসনের স্বার্থে বিদেশগামী গৃহকর্মীসহ সব মহিলা কর্মীদের অভিবাসন ছাড়পত্র প্রদান প্রক্রিয়া শতভাগ অনলাইনে সম্পন্ন করণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
পরবর্তীতে গত ১৬ মে অপর এক স্মারকে পরিচালক (বহির্গমন) মোহাম্মদ আব্দুল হাই স্বাক্ষরিত অপর এক চিঠিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি ও রিক্রুটিং এজেন্সির সব ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রতিনিধিদের কাছে পাঠান। তবে নতুন নিয়মে (শতভাগ অনলাইনে) মহিলা গৃহকর্মীদের ছাড়পত্র দেয়ার কার্যক্রম বিএমইটি থেকে শুরু করা হয়েছে কি না তা গত রাতে জানা সম্ভব হয়নি।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জনশক্তি ব্যবসায়ী ও বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো: আবুল বাশার এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি শতভাগ অনলাইনে কর্মীর ছাড়পত্র গ্রহণ ও প্রেরণের পক্ষে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এর ফলে বিএমইটি অফিসের কার্যক্রম তাড়াতাড়ি হবে এবং এজেন্সিগুলোও দ্রুত এর সুফল পাবেন। তিনি বলেন, আমি সৌদি আরবে বিগত দিনে অনেক কর্মী পাঠিয়েছি। এখন আর পাঠাই না। কারণ সেখানে নিয়োগকারীর কারণে আমাদের মহিলা কর্মীদের অনেকেই সমস্যায় পড়েন।
এসব নিয়ে দূতাবাসে গেলেও সেখান থেকে (দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলরের) কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয় অনেক অভিযোগের বিষয়ে তাদের কাছে গেলে তারা পাত্তা দিতে চান না। অথচ আগে জেদ্দার শ্রম কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম যে আন্তরিকতা নিয়ে এজেন্সিগুলোর সমস্যা দেখতেন এখন সেখানকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সেভাবে দেখেন না বলে অনেক মালিক আমাকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বেশির ভাগ সময় দূতাবাস অভিযোগ পেলেও সমাধানের জন্য ঘটনাস্থলে যেতে গড়িমসি করেন। তা ছাড়া অভিযোগের আগেই তো আমাদের এজেন্সি মালিকদের ওপর নানা খড়গ নেমে আসে। মামলা মোকাদ্দমাসহ নানা ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। যার কারণে এখন মহিলা গৃহকর্মী বিদেশে পাঠানোই বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। বায়রার সাধারণ সদস্যরা বলেন, সৌদি আরবে যে পরিমাণ লোক যাচ্ছে সেই তুলনায় দূতাবাসে জনবল কম আছে এটা ঠিক। তবে আমাদের দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংগুলো যদি আরো বেশি আন্তরিক ও সক্রিয় হতেন এবং ঢাকায় মহিলা কর্মীদের সমস্যার বিষয়ে যে অভিযোগগুলো জমা পড়ছে সেগুলোতে যদি দূতাবাস কর্মকর্তারা গুরুত্ব দিতেন তাহলে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু তারা তো আমাদের মন্ত্রণালয়/বিএমইটিকেই অনেক সময় পাত্তা দিতে চান না?
এক প্রশ্নের উত্তরে বায়রার সাধারণ সদস্যরা বলেন, আমাদের মহিলাকর্মী প্রেরণ সংক্রান্ত এমওইউ চুক্তি সংশোধন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ এমওইউতে শুধু সৌদি নিয়োগকর্তার সুযোগ সুবিধার কথা উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশ অংশে রিক্রুটিং এজেন্সির প্রেরিত গৃহকর্মীর সুযোগ সুুবিধার কথা অনেক কম রয়েছে বলে জানান তারা। উল্লেখ্য, বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে দেশ থেকে ৩১ হাজার ৬০১ জন মহিলা গৃহকর্মী বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে সৌদি আরব, ওমান, জর্ডানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবেই গেছেন ২৩ হাজার ৭৯৭ জন। অথচ ২০২২ সালে এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে মহিলা গৃহকর্মী গিয়েছিলেন প্রায় ৪৫ হাজার। এজেন্সির মালিকরা বলছেন, এই চিত্রেই বোঝা যাচ্ছে বিদেশে নারী কর্মী যাওয়ার হার অনেক কমেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post