সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। এর প্রভাবে রেমিট্যান্সে সার্বিকভাবে মন্দা দেখা দিয়েছে। এতে চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
সৌদি আরব থেকে কমেছে হুন্ডির প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে আর অর্থনৈতিক মন্দায় কমছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশের মোট রেমিট্যান্সের ৩৩ থেকে ৩৫ শতাংশই পাঠান ওই দুই দেশের প্রবাসীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগে সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসত। এখনো বেশি আসে। তবে সৌদি আরবের কাছাকাছি চলে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো কোনো মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও সবচেয়ে বেশি আসে।
আবার কোনো মাসে আসে সৌদি আরব থেকে। গড়ে মোট রেমিট্যান্সের ১৮ শতাংশ আসছে সৌদি আরব থেকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছে ১৬ শতাংশ। অন্যান্য দেশ থেকেও কমছে। যে কারণে গত এপ্রিলে মার্চের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে।
সূত্র জানায়, সৌদি আরবে হুন্ডিবাজরা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এ কারণে সে দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসছে কম। যুক্তরাষ্ট্রে হুন্ডির প্রবণতা কম। তবে দেশটি এখন অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত। এ কারণে সে দেশ থেকেও আসা কমেছে। রেমিট্যান্স আহরণে তৃতীয় উৎস হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি থেকে আগেই প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল দেশটি সফর করে এর কারণ অনুসন্ধান করেছে। এতে দেখা যায়, প্রবাসীদের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা কম এবং হুন্ডিবাজদের তৎপরতা বেশি। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সেখানে কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করে হুন্ডিবাজদের তৎপরতা কিছুটা কমানো হয়েছে। ফলে সেখান থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবার ৫৮ শতাংশ বেড়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সৌদি আরব থেকে গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে রেমিট্যান্স কমেছে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর আগে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে কমেছিল ৯ শতাংশ। দেশটি থেকে গত বছরের জানুয়ারি-মার্চে এসেছিল ১০৬ কোটি ডলার। ওই বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ১০৬ কোটি ডলার আসে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে তা কমে ১০০ কোটিতে নেমে যায়। অক্টোবর-ডিসেম্বরে আরও কমে ৯১ কোটি ডলারে নামে।
চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চে আরও কমে ৮৫ কোটি ডলারে নামে। এক বছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ১৯ শতাংশ। এদিকে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি জনশক্তি যাচ্ছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ৩৮ শতাংশ জনশক্তি সৌদি আরবে গেছে। ওই সময়ে সাড়ে ৩ লাখ জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছে ১ লাখের বেশি। এরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে তা আরও বাড়ার কথা। কিন্তু বাড়ছে না।
দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে মোট রেমিট্যান্সের ১৬ শতাংশ আসে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও বর্তমানে কমেছে। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এসেছিল ৮২ কোটি ডলার, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এসেছে ৯২ কোটি ডলার। জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১০০ কোটি এবং অক্টোবর-ডিসেম্বরে ৯৭ কোটি ডলার এসেছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তা কমে ৮৩ কোটি ডলারে নামে।
তৃতীয় উৎস সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৯ কোটি ডলার। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এসেছিল ৪৫ কোটি ডলার। এরপর হুন্ডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।
এপ্রিল-জুনে প্রায় শতভাগ বেড়ে ৮১ কোটি ডলার হয়। এরপর দুই প্রান্তিকে কিছুটা ওঠানামা করেছে। গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এসেছে ৮৭ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে বৃদ্ধির হার ৯৩ শতাংশ।
গত জানুয়ারি-মার্চে দেশটিতে ৮ শতাংশ জনশক্তি গেছে। এতে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে চতুর্থ অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য। দেশটি থেকে জানুয়ারি-মার্চে এসেছে ৫৫ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এসেছিল ৫৭ কোটি ডলার।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মধ্যে কাতার থেকে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ১৪ দশমিক ৬৮, ওমান থেকে ৬২ দশমিক ২০, বাহরাইন থেকে ৫৪ দশমিক ৮০ এবং কুয়েত থেকে ১৮ শতাংশ বেড়েছে। দেশের মোট রেমিট্যান্সের ৫৩ শতাংশই আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। আলোচ্য প্রান্তিকে এসব দেশ থেকে বেড়েছে ২৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। মোট রেমিট্যান্সের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে আসে ১৬ শতাংশ। আলোচ্য প্রান্তিকে বেড়েছে ২৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে জার্মানি থেকে ৩ কোটি এবং ইতালি থেকে ২৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
মোট রেমিট্যান্সের এশিয়া ও প্রাশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো থেকে আসে সাড়ে ৮ শতাংশ। এ অঞ্চল থেকে আলোচ্য প্রান্তিকে ৩৩ দশমিক ৩১ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ, জাপান থেকে ৩ কোটি, মালয়েশিয়া থেকে ২৯ কোটি এবং সিঙ্গাপুর থেকে ১২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অন্যান্য দেশ থেকে রেমিট্যান্স আসে ৮ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমায় রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাত রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমে গেলে সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায়ও জটিলতা দেখা দেয়।
এতে রিজার্ভ কমে গিয়ে ডলারের ওপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি করে। গত বছরের মে মাসে রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ২২৪ কোটি ডলার। চলতি মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৮ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স থেকে দেশের মোট জিডিপিতে অবদান ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি কমায় চলতি বছর এর অবদান আরও হ্রাস পাবে।
আরও দেখুন…
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post