সাউদিয়া এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে আড়াই শতাধিক সৌদিপ্রবাসী দেশে ফিরেছেন। ছয় থেকে দশ মাস আগে এরা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। কিন্তু এক কাপড়ে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
রোববার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাতে তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। এদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের। প্রবাসীদের দাবি, তাদের বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে সৌদি কারাগারে পাঠানো হয় তাদের। সেখানে একই রুমে গাদাগাদি করে রাখা হয় কয়েকশ প্রবাসীকে। পরে তাদের জোরপূর্বক এক কাপড়ে দেশে ফেরত পাঠায় সৌদি সরকার।
ফেরত আসা প্রবাসীরা জানান, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের সৌদিতে পাঠিয়েছে। কিন্তু তারা সঠিক ভিসা দেয়নি। যে কাজের ভিসা নিয়ে তারা বিদেশে গেছেন, সে কাজ বা বেতন কিছুই পাননি। বাধ্য হয়ে অন্য কাজ খুঁজতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে আটক হন তারা। পরে কোনো কিছু না শুনে তাদের জেলে পাঠানো হয়।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বিদেশ পাঠানোর জন্য গড়ে প্রতিটি শ্রমিকের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ করে টাকা নিয়েছে। এভাবে প্রায় সোয়াশ কোটি টাকা নিলেও বৈধ হতে পারেননি এসব এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া কোনো শ্রমিক; পাননি প্রতিশ্রুত কাজও।
চট্টগ্রামের বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী হাবিব। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর আশায় রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে গিয়েছিলেন সৌদি আরব। ছয় বছর পর দেশে ফেরার কথা থাকলেও ফিরেছেন শূন্যহাতে। মধ্যরাতে পলিথিনের একটি পোটলা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শাহজালাল বিমানবন্দরে।
হাবিব জানান, আকামা, পাসপোর্ট সব আছে। তারপর পাসপোর্ট, মোবাইল সব কেড়ে নিয়ে গাড়িতে করে তাকে জেলে পাঠিয়ে দেয় সৌদি পুলিশ। সেখান থেকে খালিহাতে পাঠানো হয় দেশে। এখন বাড়িতে যাওয়ার ভাড়াটুকুও তার কাছে নেই। তার মতো এমন ভাগ্যবরণ করতে হয়েছে অনেককে।
ফেরত পাঠানো আরেক প্রবাসী বলেন, ভিসার মেয়াদ ছিল, তিনি একটি কোম্পানিতেও ছিলেন। কিন্তু তারপরও তারা নতুন করে আবার ভিসা খুলেছে।’
ফেরত পাঠানো অন্য এক প্রবাসী বলেন, ‘২৯ দিন আটকায় রাখছে। পরশু (২৯ এপ্রিল) থেকে এখন পর্যন্ত পানিও খাইতাম পারছি না।’
শ্রমিকরা জানান, এক রুমে প্রায় এক থেকে দেড়শ লোককে আটকে রাখা হয়। খাবার ছিল না, পানি ছিল না। একজনের ওপর আরেকজন শুয়ে থাকতে হতো। তাদের কাছে কোনো টাকা নেই। এখন বিমানবন্দরে এসে নেমেছেন; কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার মতো ভাড়ার টাকাও নেই।
ফেরত পাঠানো আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমার এখনও আকামা আছে আট মাসের। আমাকে এসে সৌদি পুলিশ ধরল; আকামা দেখানোর পর সেটি ভেঙে ফেলল। তারপর আমার হাতে একটি পানির বোতল দিয়ে আমাকে কোর্টে চালান করে দিলো। বাংলাদেশ এম্বাসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা শুধু বলে জানাচ্ছি, জানাচ্ছি।’
ফেরত পাঠানো এই শ্রমিকদের কেউ ১০ মাস, কেউ এক বছর, দুবছর, কেউবা আবার ছয়-সাত বছর সৌদিতে থাকলেও তাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিনই সৌদি থেকে প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের এক কাপড়ে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তাদের সহায়তা দিতে বিমানবন্দরেও থাকে না কোনো সরকারি সংস্থা। এমনকি বৈধভাবে যাওয়া এ শ্রমিকদের কত সংখ্যক অবৈধ হয়ে দেশে ফেরত আসছে, তার হিসাবও রাখা হয় না ঢাকার বিমানবন্দরে।
সূত্র: সময় নিউজ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post