ছয় মাস পর ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বৈশ্বিক এই ইভেন্টের জন্য নতুন ব্যাট না হলে কি চলে! ভারতের ব্যাটাররা তাই নতুন ব্যাট বানানোর দায়িত্ব পেয়েছেন একটি ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী সংস্থা। বিশ্বকাপের বেশ আগেই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন ব্যাট। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের নতুন ব্যাটে ঘষামাজা করে তৈরি করছেন বাংলাদেশের ‘ব্যাট ডাক্তার’ হুসেন মোহাম্মদ আফতাব শাহীন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানায়, কোহলি, রোহিত, সূর্যকুমারদের ব্যাট তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। একই সংস্থার হলেও প্রত্যেকের ব্যাট ভিন্ন। ব্যাটের ওজন, হাতলের মাপ সবখানে ভিন্নতা। সাদা চোখে দেখতে একরকম মনে হলেও প্রতিটি ব্যাটের রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের ব্যাট তৈরি করতে হয় বিশেষ যত্ন সহকারে। পছন্দ না হলে ব্যাট ফিরিয়ে দিতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না কোহলি, রোহিতরা। ব্যাট নিয়ে ক্রিকেটারদের খুঁতখুঁতে স্বভাব নতুন কিছু নয়। তা ভালোভাবে জানেন সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া সংস্থা প্রস্তুতকারী সংস্থাও। তাই তাদের ভরসা আফতাব শাহীন। ক্রিকেটারদের কাছে তিনি পরিচিত ‘ব্যাট ডাক্তার’ নামে।
পাকিস্তানে শাহীন শাহ আফ্রিদির ব্যাটের কাজ সম্পূর্ণ করে এখন তিনি হাত দিয়েছেন সূর্যকুমারের ব্যাট তৈরির কাজে। আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন কোহলি এবং রোহিতের পছন্দ মতো ব্যাট। ক্রীড়া সংস্থা প্রস্তুতকারী সংস্থাটি সাধারণ ব্যাট তৈরি করে পাঠিয়ে দেয় বাংলাদেশের রাজশাহীর বাসিন্দা আফতাবের কাছে। তিনি ক্রিকেটারের নির্দেশ মতো গড়ে দেন তাদের বিশেষ ব্যাট। ব্যাটের ওজন, ব্লেডের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা সব কিছুই নির্ভর করে আফতাবের দক্ষতার ওপর। বাংলাদেশের জাতীয় দলের প্রায় সব ক্রিকেটারই তার তৈরি ব্যাট ব্যবহার করেন। ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বেশ কিছু প্রথম সারির ক্রিকেটারও তার তৈরি ব্যাট ছাড়া হাতে তোলেন না। এশিয়ার ক্রিকেটারদের কাছে এমনই খ্যাতি আফতাবের।
প্রথাগত পড়াশোনা শেষ করে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন আফতাব। ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা থেকে বেছে নিয়েছেন ব্যাট তৈরির কাজ। আন্দ্রে রাসেল, সিকান্দার রাজার মতো ক্রিকেটাররাও ব্যাটের জন্য বাংলাদেশের আফতাবের দ্বারস্থ হন। অস্ট্রেলিয়ার কিছু ক্রিকেটারও এখন ব্যাট তৈরি করান বাংলাদেশের এই শিল্পীর কাছে। আফতাব যে ব্যাট তৈরি করেন, তার কাঠ আনা হয় ইংল্যান্ড থেকে, ইংলিশ উইলো ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের ব্যাট তৈরি করেন না তিনি। এক সময় শচীন টেন্ডুলকার, কুমার সাঙ্গাকারা, আজহার মাহমুদ, ডোয়াইন ব্র্যাভোর জন্য ব্যাট তৈরি করতেন ‘ব্যাট ডাক্তার’। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা ব্যাটের জন্য তার ওপরই নির্ভর করেন।
আফতাব বলেছেন, ‘২৪ বছর ধরে কাজ করছি। ব্যাটের মডিফিকেশন এবং কাস্টমাইজেশনের কাজ প্রথমে ছিল নেশা। এখন পেশা হয়ে গিয়েছে। প্রতি দিন চেষ্টা করি আগের দিনের থেকে আরও ভালো এবং নিখুঁত ব্যাট তৈরি করতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের ভরসাই আমার প্রাপ্তি।’ নতুন ব্যাট তৈরির পাশাপাশি তিনি সারিয়েও দেন পুরোনো ব্যাট।
এখন আফতাবের স্বপ্ন বাংলাদেশে প্রথম ব্যাট তৈরির কারখানা গড়ে তোলা। তার এই স্বপ্নপূরণের সঙ্গী জাতীয় দলের দুই ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ ও ইমরুল কায়েস। রাজশাহীতে তৈরি হবে কারখানা। মিরাজ বলেছেন, ‘বিদেশ থেকে প্রচুর খরচ করে ব্যাট আনাতে হয় আমাদের। বাংলাদেশে ভালো ব্যাট তৈরি হয় না। ভারতীয় সংস্থাগুলো সবসময় আমাদের সেরা মানের ব্যাট দেয় না। সেগুলো মূলত ভারতীয় ক্রিকেটারকেই দেওয়া হয়। আমাদের এখানে কারখানা তৈরি করা গেলে সেই সমস্যার সমাধান হবে। সেই চেষ্টা করছি আমরা।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘ক্লাব পর্যায় থেকে জাতীয় দলের সব ক্রিকেটারদের আমরা ভালো মানের ব্যাট সরবরাহ করতে চাই। মহিলা ক্রিকেটারদেরও ব্যাট দেবো আমরা। কাউকে আর ব্যাট কিনতে হবে না। ভালো ব্যাটের অভাবে কারও খেলা ক্ষতিগ্রস্ত হোক চাই না আমরা। সেই লক্ষ্যেই আফতাব ভাইয়ের সঙ্গে আমি আর কায়েস হাত মিলিয়ে ব্যাট কারখানা তৈরি করছি। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট ব্যাট কারখানা কতদূর সাফল্য পাবে, তা অনিশ্চিত। কোহলি, রোহিত, সূর্যকুমারদের ভরসা কিন্তু রাজশাহীর আফতাবই।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post