হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) দুই এজেন্টকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। আটককৃতরা হলেন- শাহাদাৎ হোসেন ও বলাই চন্দ্র দাস ।
এ সময়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পাচারের কাজে ব্যবহৃত এজেন্ট সিম, একটি ল্যাপটপ, সাতটি মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ, চেক বই, ব্যাংকের এটিএম কার্ডসহ নগদ ১৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার রাতে সিআইডির সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের অন্যতম বড় মাধ্যম হচ্ছে হুন্ডি। আর বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (মোবাইল ব্যাংকিং) মাধ্যমে দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার আরও সহজতর হয়েছে।
অবৈধ সুযোগ- সন্ধানী কিছু মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট দেশে-বিদেশে অবস্থানরত টাকা পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সহায়তায় বিদেশে টাকা পাচার করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ যখন রেমিটেন্স আকারে দেশে আসে, তখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো সুদৃঢ় হয়।
কিন্তু হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিদেশে অবস্থানরত এই চক্রটি প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে দেশে না পাঠিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দেয়। আর এ দেশে অবস্থানরত অবৈধ অর্থ পাচারকারীরা এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করছে। এই অবৈধ বিদেশে অর্থ পাচারকারী মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের বিরুদ্ধে সিআইডি অনুসন্ধান শুরু করে।
সিআইডির ভাষ্যমতে, অনুসন্ধান ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় নোয়াখালীর চাটখিল থানার আদর্শ টেলিকম, বাবর টেলিকম, নিউ শাড়ি গ্যালারি এন্ড কসমেটিক্স ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টরা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচারের সাথে জড়িত।
তাদের লেনদেন বিবরণী বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এসব প্রতিষ্ঠান বিগত তিন বছরে বিকাশের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিআইডি প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচারের সাথে জড়িত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) এজেন্টদের বিরুদ্ধে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের একটি চৌকস টিম বুধবার ভোরে নোয়াখালীর চাটখিল থানা এলাকায় একটি অভিযান চালায়।
অভিযানে চাটখিল থানার দক্ষিণ রেজ্জাকপুর থেকে শাহাদাৎ হোসেন এবং বলাই চন্দ্র দাসকে আটক করে। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পাচারের কাজে ব্যবহৃত এজেন্ট সিম, একটি ল্যাপটপ, সাতটি মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ, চেক বই, ব্যাংকের এটিএম কার্ডসহ নগদ ১৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, শাহাদাৎ হোসেনের আপন চাচা কাতার প্রবাসী মনোয়ার, সৌদি প্রবাসী, মিজান হংকং প্রবাসী, এবং মমিনসহ বেশ কিছু প্রবাসী বিদেশ থেকে রেমিটেন্স সংগ্রহ করেন। ওই টাকা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে নিজেদের কাছে জমা রাখেন।
আর হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোর মাধ্যমে শাহাদাৎকে বিকাশে ক্যাশ-ইন করার জন্য মোবাইল নম্বর পাঠায়। বিদেশ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমোতে নির্দেশনা পাওয়ার পর বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শাহাদাতের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেয়।
শাহাদাৎ হোসেন ব্যাংকে জমা হওয়া টাকা উঠানোর পরে বিকাশের এজেন্ট নম্বরের ই-মানি সংগ্রহ করে। শাহাদাৎ এবং বলাই বিদেশে থাকা ব্যক্তিদের নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থানরত প্রবাসীদের আত্মীয়দের বিকাশ নম্বরে ওই টাকা পাঠিয়ে দেয়। এভাবে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে রেমিটেন্স না এনে বিদেশে টাকা পাচার করছে।
আটক দুজনের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পল্টন থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
আটক শাহাদাৎ হোসেন নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার দক্ষিণ রেজ্জাকপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে। অন্যজন বলাই চন্দ্র দাস একই গ্রামের অর্জুন চন্দ্র দাসের ছেলে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post