দুই মাস আগে সংশ্লিষ্ট কাউকে কিছু না জানিয়েই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যাণ্ডেলিং কার্যক্রম পরিদর্শনে যান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এ সময় ইমিগ্রেশনে এক যাত্রীকে দেখা গেল, বিমানবন্দরে ইলেকট্রনিক গেট (ই-গেট) ব্যবহারের চেষ্টা করতে।
কিন্তু তিনি পারছিলেন না। কয়েকবার চেষ্টা করলেন। তাও হলো না। এ সময় মন্ত্রীকে নিজের পাসপোর্ট দেখালেন ওই যাত্রী। সমস্যার কথা জানালেন। পরে মাহবুব আলী দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলেন। তিনি জানালেন, সার্ভার জটিলতার কারণে ই-গেট সাময়িকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হলো রোববার (৯ এপ্রিল)। দুই যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করে ইমিগ্রেশন পার হতে চাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই ই-গেট পার হতে পারছিলেন না। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-গেট কার্যক্রম বন্ধ। তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, সার্ভার জটিলতার কারণে এ সেবা বন্ধ আছে। যাত্রীদের প্রশ্ন, বন্ধই যদি থাকে শাহজালালে কেন দরকার ই-গেটের? কেনই বা এ কার্যক্রম শুরু হলো?
প্রায় ১১ মাস পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ করে ২০২২ সালের ৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-গেট কার্যক্রম উদ্বোধন হয়। এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এ পথ ব্যবহার করেছেন মাত্র ১ লাখ যাত্রী। অথচ, প্রতি মাসে গড়ে ৫ লাখ যাত্রী বিদেশ যাত্রায় এ বিমানবন্দর ব্যবহার করে। সে হিসেবে মাত্র ২ শতাংশ যাত্রী এখন পর্যন্ত ই-গেট ব্যবহার করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিমানবন্দরে স্থাপিত ২৭টি ই-গেট জার্মানি থেকে আমদানি। দাবি করা হয়, এসব গেট অত্যাধুনিক। কয়েকদিন ব্যবহারের পর শুরু হয় ই-পাসপোর্টের সঙ্গে ই-গেটের সার্ভারের সংযুক্তি জটিলতা।
উদ্বোধনের পর থেকে মাঝে-মধ্যে গেটগুলো বন্ধ হতে শুরু করে। ই-পাসপোর্টধারী বহু যাত্রী বিমানবন্দরে বহির্গমনের সময় ই-গেট বন্ধ দেখতে পান। ফলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন শেষ করে তাদের বিমানে উঠতে হয়।
জানা গেছে, ই-পাসপোর্টধারী একজন যাত্রীকে ই-গেটের মাধ্যমে ইমিগ্রেশনে শেষ করতে সময় লাগে মাত্র ১৮ সেকেন্ড। ভেরিফিকেশন শেষে ই-গেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায়। তার আগে ই-পাসপোর্টধারীকে তার ডিজিটাল ছবিযুক্ত তথ্য বিবরণী ই-গেটের মনিটরে স্পর্শ করতে হয়। এরপর ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ই-গেটের কাচের দরজা খুলে যাবে।
সেটি দিয়ে প্রবেশের পর স্ক্যানিং গেটের সামনে দাঁড়ালে ৫ থেকে ৬ সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-পাসপোর্টের যাবতীয় তথ্য ভেরিফাইড (শনাক্ত) হবে। তারপর ইমিগ্রেশনের মূল গেট খুলে গেলে সব কার্যক্রম শেষ হবে। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে বন্ধ থাকায় এসব গেটের সুবিধা নিতে পারছেন না ই-পাসপোর্টধারী বিদেশ গমনেচ্ছুরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ই-গেট চালু হওয়ার পর থেকে সেটি ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ যাত্রী এ সুবিধা নিয়েছেন।
সংখ্যাটি সন্তোষজনক কিনা, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা তো ই-পাসপোর্ট সম্পর্কিত; সেক্ষেত্রে ই-পাসপোর্টধারীর সংখ্যা বাড়লে সেবা গ্রহীতাদের সংখ্যাও বাড়বে।
সার্ভার জটিলতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন। পরে যোগাযোগ করা হয় ই-পাসপোর্ট প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার সাদাতের সঙ্গে। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে এ সংক্রান্ত প্রশ্নে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, সার্ভার জটিলতাই সব সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু।
এ কারণে ই-গেট কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না। তাই গতানুগতিক নিয়মে আমরা ইমিগ্রেশন শেষ করি। সম্পূর্ণরূপে ই-গেট চালু হলে ইমিগ্রেশনের চাপ কমবে; যাত্রীদেরও অনেক সময় সাশ্রয় হবে। নতুন করে এ কার্যক্রম শুরু এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
কবে পূর্ণাঙ্গরূপে ই-গেট কার্যক্রম শুরু হবে জানতে কয়েকবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে বাংলানিউজ। তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীর ই-পাসপোর্টধারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৯তম। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ জনতে ই-পাসপোর্ট দিয়েছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর। আরও প্রায় ১ কোটি মেশিন রিডেবল (এমআরপি) পাসপোর্ট প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানা গেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post