মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশে ফেরা প্রবাসীরা চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে ব্যাগেজ রুলে আনা পণ্য ছাড় করানো নিয়ে বিগত প্রায় ছয় মাস ধরে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, ব্যাগেজ রুলের নিয়মবিধি মেনে আনা তাদের বহনযোগ্য ও বুকিং করে এয়ারফ্রেইটে আনা ব্যক্তিগত মালামাল ও পণ্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ছাড় করাতে তারা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এজন্য তারা চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন।
দেশে ফেরা প্রবাসী যাত্রীরা বলেন, তারা কয়েক বছর পর পর দেশে ফেরার সময় আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশীদের জন্য বুকিং করে এবং হ্যান্ডব্যাগে করে কাস্টমসের ব্যাগেজ রুল ২০১৬ অনুসরণ করে যত্সামান্য উপহারসামগ্রী ও ব্যক্তিগত ব্যবহার্য মালামাল আনেন। কিন্তু ‘এসব পণ্য নিয়ে দেশে ব্যবসা করা হচ্ছে’—এমন অভিযোগ তুলে কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত ছয় মাস ধরে তাদের অবর্ণনীয় হয়রানি করছেন। এমনকি মালামাল ও পণ্যসামগ্রী মাসের পর মাস আটকে রাখছেন বলেও তারা জানান।
প্রবাসীরা বলেন, ব্যাগেজ রুল অনুসারে বিমানবন্দর দিয়ে ২৬ ধরনের মালামাল ও পণ্য শুল্কমুক্তভাবে আনার সুযোগ রয়েছে। প্রবাসীরা এই ২৬ ধরনের পণ্যই নিজের জন্য বা পরিবারপরিজনের জন্য আনেন। ব্যাগেজ রুল অনুসারে একজন প্রবাসীর ঐসব পণ্য ও মালামালের ৬৫ কেজি পর্যন্ত নিজের সঙ্গে করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনার আইন রয়েছে। আবার তারা বুকিং করে ফ্রেইটেও নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্কমুক্ত মালামাল আনতে পারেন।
এজন্য তাদের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে নির্ধারিত ফরমে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাবরে পণ্যের ঘোষণা দিতে হয়। এতকিছু প্রতিপালন করেও গত ছয় মাস দেশে আসা প্রবাসীরা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে তাদের মালামাল ঘরে নিতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দায়িত্বে নিয়োজিত চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. আহসান উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইত্তেফাককে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে প্রবাসীদের ব্যাগেজ রুলের পণ্য আটকে রেখে ছাড় না দেওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা স্যারের (কাস্টমস কমিশনার) নির্দেশনা অনুসারে বন্ধ আছে। আমরা যা করছি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই করছি।’ এরপর এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাস্টমস কমিশনার মো. ফয়েজুর রহমানকে পাওয়া যায়নি।
দুবাই থেকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুর এলাকার বাসিন্দা মিঠু বড়ুয়া। ঐ দিন শাহ আমানতে ব্যাগেজ রুলে হাতে করে আনা তার মালামালের মধ্যে মাত্র ১০ কেজি মালামাল তাকে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়। তিনি দুবাই থেকে বুকিং করে ২০০ কেজির যে মালামাল এয়ার ফ্রেইটে পাঠিয়েছিলেন তা চট্টগ্রাম শাহ আমানতে পৌঁছে ২০ ফেব্রুয়ারি।
তিনি জানান, তার দেশে ফেরা অপর প্রবাসী ভাই ২০ ফেব্রুয়ারি শাহ আমানতে আসা বুকিং করা পণ্য যথাযথ নিয়মে আনতে গেলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, ‘বৈঠক চলছে, ঝামেলা চলছে। ব্যাগেজ কয়েক দিন পর দেওয়া হবে।’ সেই পণ্য নিতে তাকে গত দেড় মাসেও ডাকা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, তার ব্যাগেজে রয়েছে নিজেদের ব্যবহৃত ছোট ছোট কম্বল, ডাইপার, আত্মীয়স্বজনদের দেওয়ার জন্য কসমেটিকস, বাচ্চাদের খাবার ও পুরনো কাপড়চোপড় ইত্যাদি।
তিন বছর পর স্ত্রীকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে গত ৭ মার্চ আবুধাবি থেকে শাহ আমানত দিয়ে দেশে ফেরেন চট্টগ্রামের অধিবাসী প্রবাসী মো. মান্নান। তিনি বলেন, তিনি গত ২ মার্চ আবুধাবি থেকে বুকিং করে এয়ার ফ্রেইটে পরিবারের সদস্যবৃন্দ, আত্মীয়স্বজনদের জন্য শুল্কমুক্তভাবে আমাদানিযোগ্য নানা পণ্য ও মালামালের একটি ব্যাগেজ পাঠান।
এত রয়েছে, ১০০ গ্রাম লং, দুধ, লজেন্স, আধা কেজি চাপাতা, গৃহস্থালি সামগ্রী ও তার ব্যক্তিগত ব্যবহার্য নানা জিনিস। তিনি জানান, ১ এপ্রিল পর্যন্ত তাকে এসব পণ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য খবর দেওয়া হয়নি। এসব পণ্যের ব্যাপারে ‘এ’ ফরমে যথাসময়ে ঘোষণা দেওয়া আছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার বিপুল সংখ্যক লোক মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরি-ব্যবসাসহ নানা কাজে যুক্ত থেকে অর্থ উপার্জন করছেন এবং প্রতি বছর দেশে মোটা অঙ্কের রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।
সূত্র: ইত্তেফাক
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post