দুবাইয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের। ভুগছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে। কীভাবে দুবাই পুলিশের হাত থেকে গ্রেপ্তার এড়াবেন সেই ফন্দি আঁটছেন। এ নিয়ে কথা বলছেন ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে। কিন্তু কারও কাছ থেকেই ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন না বলে আরাভ খানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে আরাভ খান কীভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট পেলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও আধার কার্ড বানালেন এ বিষয়ে জানতে দিল্লিতে যাচ্ছে ঢাকার চিঠি। আরাভ খানের প্রকৃত নাম যে রবিউল ইসলাম এবং সে যে বাংলাদেশি নাগরিক, তার নানা প্রমাণপত্রও চিঠিতে থাকছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে আরাভ খান যে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট সংযুক্তি দেওয়া হচ্ছে চিঠির সঙ্গে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্তসহ একটি চিঠি ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর চিঠিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে এই চিঠি যাচ্ছে দিল্লিতে।
জানা গেছে, আরাভ দেশে থাকাক লে যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই অবৈধ কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান রাজধানীর বনানীর যে ফ্ল্যাটে খুন হন, সেখানেই রবিউল তার সহযোগীদের দিয়ে যৌন ব্যবসা চালাতেন। মামুন খুনের মামলায় ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া কেয়াসহ সাত আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য রয়েছে।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আরাভের বিষয়ে দুবাইয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ফেরানোর সবকিছুই করা হচ্ছে। এখন তাকে ফেরানোর পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারের চাহিদা ও তৎপরতার ওপর। এক্ষেত্রে দুই দেশের সরকারকেই সম্মত হতে হবে।
সুরাইয়া আক্তার কেয়া তার জবানবন্দিতে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে রবিউলের সঙ্গে তার প্রথমে পরিচয় এবং পরে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, রবিউল যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি নারীদের সঙ্গে পুরুষের আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করতেন। এক সময় তিনিও এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। আর যৌন ব্যবসার জন্য বনানীর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সেই ফ্ল্যাটেই পুলিশ কর্মকর্তা মামুনকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ বলছে, চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল রাজও আরাভ খানচক্রের লোক। পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকাণ্ডের পর নজরুল রাজকেও পুলিশ আটক করেছিল। কিন্তু খুনে তার যোগসূত্র না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, মামুন হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বিয়ে করেন। পরে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। পাসপোর্টে নাম দেওয়া হয় আরাভ খান। এই পাসপোর্ট নিয়েই তিনি চলে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। গত সপ্তাহে দুবাইয়ে তার মালিকানাধীন ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজন তারকা যোগ দিলে আরাভ আলোচনায় আসেন।
পুলিশ জানায়, ২০১৮ সালের ৯ জুলাই গাজীপুরের জঙ্গল থেকে পুলিশ পরিদর্শক মামুনের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়। মামলাটি তদন্ত করে রবিউল, সুরাইয়াসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post