সময়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল ‘রেড নোটিশ’ জারির এক দিনের মাথায় দুবাই পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন বলে গুঞ্জন ওঠেছে। সোমবার অর্থাৎ ২০ মার্চ রাতেই দুবাই পুলিশ তাকে আটক করে বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন আগামী দুই একদিনের মধ্যে পুলিশের একটি দল তাকে ফিরিয়ে আনতে দুবাই যাবে।
এর আগে গতকাল পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। ইন্টারপোল সেই আবেদন গ্রহণ করেছে। বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামি রবিউল ওরফে আপন ওরফে আরাভ খাঁনের অপকর্ম একের পর এক বেরিয়ে আসছে। একাধিক বিয়ে, প্রতারণা, ব্ল্যাক মেইল, হত্যা সহ অপরাধ জগতে রয়েছে তার নানা বিচরণ। এমনকি নিজের শ্বশুরকে পর্যন্ত অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা আদায় করেছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন মামলার নথি ঘেঁটে জানা যায়, আরাভ একসময় মোটরসাইকেল চুরি, ক্যামেরা ছিনতাই, অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা আদায়, মামলায় অন্য ব্যক্তি দিয়ে সাজা খাটানোসহ অসংখ্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে এসব অপরাধ করেও বেড়াতো আরাভ। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ ও অস্ত্র মামলাসহ অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি বলছে, আপন পরিচয়ে ঢাকায় ‘প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের’ একটি ‘দল’ চালাতেন আরাভ। তিনি অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে কৌশলে সম্পদশালীদের এনে মেয়েদের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত মুহূর্তের’ ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করতেন। বনানীর যে বাসায় পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুন হন, সেটিও এ রকম একটি বাসা ছিল। অভিনয় বা মডেলিং করেন, এ রকম তরুণীদের নানা কাজে ব্যবহার করতেন আরাভ। ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে নয়টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কোটালীপাড়া থানায় এসেছে বলে জানিয়েছেন কোটালীপাড়া থানার ওসি মো. জাকারিয়া।
এদিকে ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি রবিউল ইসলাম ওরফে ওরফে হৃদয় ওরফে আরাভ খানের বিরদ্ধে উপপরিদর্শক সুজন কুমার কুণ্ডু বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ১ মার্চ আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ মামলায় ওই বছরের ১০ মে আদালত অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে বিচার শুরু হলেও গত আট বছরে এ মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি।
এ মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ আরাভ খান জামিন পান। পরে আদালত ওই বছরের ২৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় মোট ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৮ মার্চ এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
২০১৭ সালে জুন মাসে এক বন্ধুর ডিএসএলআর ক্যামেরা চুরির মামলায় কারাগারে গিয়েছিলেন আরাভ খান। মামলাটি হয়েছিল রাজধানীর গুলশান থানায়। সে বছরই গ্রেপ্তার করে জেল খাটেন আরাভ। পরে জামিনে বের হয়ে আসেন। সেই মামলার বিচারকার্য এখনো চলছে। তবে এ মামলায় সাক্ষী না আসায় বিচার কাজ আটকে গেছে। ২০১৮ সালের ৭ মে আদালত আরাভ খানের উপস্থিতিতে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। বিচার শুরুর পর ২০১৯ সালের ১৪ মে আদালত তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ মামলায় ১৬ বার সাক্ষীর প্রতি সমন দেওয়া হয়। তবে ২০১৯ সালের ১৪ মে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। তা ছাড়া আর কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে কোনো সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১২ জুন দিন ধার্য রয়েছে।
হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান নিজের পরিবর্তে আবু ইউসুফকে আসামি হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর অন্যের রূপ ধারণ করে জামিনের জন্য আত্মসমর্পণ ও সহায়তার অপরাধে ২০২১ সালের ১ জুন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী এএসএম শাহাদাৎ আলী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক অনিল চন্দ্র রায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার মহানগর হাকিম আতাউল্লাহের আদালতে বিচার শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি এ মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করায় আগামী ১৫ মে অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। এ মামলার আসামিরা হলেন—মো. আবু ইউসুফ, মো. রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়, জুবায়ের আহমেদ বাপ্পি, জিএম ফরহাদুল মজুমদার ও এডভোকেট শোহেল মো. ফজলে রাব্বি। এ মামলায় পলাতক আরাভ খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post