বছর ঘুরে আবারও শুরু হতে চলেছে পবিত্র রমজান মাস। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে বুধবার বা বৃহস্পতিবার থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) পবিত্র এই মাসটি শুরু হতে যাচ্ছে। আর এ উপলক্ষে দেশটিতে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। এরই ধারাবাহিকতায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির দুবাইয়েও নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি। সেখানে ইফতারের সময় জানান দিতে একসঙ্গে আটটি কামান থেকে ছোড়া হবে গোলা। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে এর প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে দুবাই। সোমবার (২০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোলাবর্ষণের মাধ্যমে ইফতারের সময় জানান দিতে দুবাই পুলিশ আমিরাতের বিভিন্ন অংশে ৮টি কামান স্থাপন করেছে। এসব কামানের মধ্যে সাতটি কামান নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপিত (ফিক্সড) এবং অন্যটি ভ্রাম্যমাণ কামান। ভ্রাম্যমাণ এই কামানটি পবিত্র রমজান মাসজুড়ে দুবাইয়ের ১৫টি এলাকায় ভ্রমণ করবে। সোমবার দুবাই এক্সপো সিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে খালিজ টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ১৯৬০ এর দশকের শুরু থেকে আমিরাতে ইফতারের সময় জানান দিতে কামান থেকে গোলাবর্ষণ রমজানের একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। দুবাইয়ের অপারেশনস অ্যাফেয়ার্সের সহকারি কমান্ডার-ইন-চিফ মেজর জেনারেল আবদুল্লাহ আলী আল গাইথি নিশ্চিত করেছেন, রমজানকে সামনে রেখে দুবাই পুলিশ ইতোমধ্যেই এসব কামানের প্রস্তুতি শেষ করেছে।
পবিত্র এই মাসে প্রতিদিনই দিনের শেষে রোজার সমাপ্তি এবং ইফতার শুরু করার ঘোষণা দিতে কামান থেকে একটি করে গোলাবর্ষণ করা হয়। এছাড়া রমজান মাস শুরুর সময় এবং ঈদের সূচনা তথা চাঁদ দেখা গেলে দু’টি করে গোলাবর্ষণ করা হয়। মেজর জেনারেল আল-গাইথির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ে কামান থেকে গোলাবর্ষণের জন্য নির্বাচিত প্রতিটি এলাকায় একজন কর্মী নিযুক্ত করা হয়েছে। এই বছর দুবাই এক্সপো সিটি, বুর্জ খলিফা, আপটাউন, মদিনাত জুমেইরাহ, ফেস্টিভাল সিটি, দামাক এবং হাত্তা ইন-সহ আমিরাতজুড়ে সাতটি স্থানে কামান স্থাপন করেছে দুবাই পুলিশ।
এছাড়া মোবাইল বা ভ্রাম্যমাণ কামানটি দুবাইয়ের ১৫টি এলাকায় ঘুরবে। প্রথমে এই কামানটি সাতোয়া গ্র্যান্ড মসজিদ থেকে শুরু হয়ে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল সেন্টার, জাবিলের গ্র্যান্ড মসজিদে, তারপরে লুসাইলির আল-নাহদা স্কুল ফর গার্লস, এরপর এটি আল-হাবাব মসজিদে স্থানান্তরিত হবে। তারপর আল-আবির গ্র্যান্ড মসজিদ, আল-খাওয়ানিজের আল-হাবাই মসজিদ, আল-তোয়ার বিন দাফুস মসজিদ, আল-কুওজ ৪ ‘আল-খাইল হাইটস’ এলাকায়, মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম সিটি, আইন দুবাই, আল-বার্শার আল-সালাম মসজিদ এবং জুমেইরার কাইট বিচ, নাদ আল শেবা মসজিদ এবং অবশেষে মানখুলের ঈদের নামাজের হল এলাকায় গিয়ে ইফতারের সময় গোলাবর্ষণ করবে।
দুবাইয়ের কমিউনিটি হ্যাপিনেসের জেনারেল ডিপার্টমেন্টের নিরাপত্তা সচেতনতা বিভাগের পরিচালক বুট্টি আল ফালাসি বলেছেন, রমজান মাসজুড়ে ইফতারের সময় জানান দিতে কামান দাগানোর এই ঐতিহ্য চালু রাখতে দুবাই পুলিশ খুব আগ্রহী। এটিকে পবিত্র মাসের অন্যতম প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। একইসঙ্গে এই রীতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমাজে আরব সংস্কৃতি ও ইসলামিক রীতিনীতি, ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে বলেও মনে করা হয়। তিনি আরও বলেন, ইফতারের সময় কামান থেকে গোলা নিক্ষেপের এই কার্যক্রম দুবাই টিভিতে সম্প্রচার করা হয়।
এদিকে রোজা কবে থেকে শুরু হবে তা জানতে অর্থাৎ রমজান মাসের শুরুর সময় নির্ধারণের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের চাঁদ দেখা কমিটি মঙ্গলবার মাগরিবের নামাজের পরে বৈঠকে বসবে। মূলত রমজান শুরু হওয়ার আগে মুসলিম এবং ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ চাঁদ দেখার জন্য সন্ধ্যার আকাশের দিকে নজর রাখেন। আর এটি একটি ঐতিহ্য যা ইসলামে যুগ যুগ ধরে অনুসরণ করা হয়েছে। যদি সংযুক্ত আরব আমিরাতে আজ চাঁদ দেখা যায় তবে ২২ মার্চ (বুধবার) পবিত্র রমজান থেকে শুরু হবে। আর যদি চাঁদ দেখা না যায়, তবে পবিত্র এই মাসটি আমিরাতে ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে। মূলত চাঁদ কখন দেখা যায় তার ওপর নির্ভর করে ইসলামিক মাস ২৯ বা ৩০ দিনের হয়ে থাকে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post