আমেরিকানরা গত তিন-চতুর্থাংশ শতাব্দী ধরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে আসছিল। হঠাৎ করে চীন সেখানে নতুন খেলোয়াড় হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। গতকাল রবিবার সৌদি আরব ও ইরান কূটনীতির বিজয়ী হিসেবে চীনকে উল্লেখ করে এক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল জাজিরায়।সংবাদমাধ্যমটিকে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্টেটক্রাফটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট পার্সি বলেন, যদিও ওয়াশিংটনের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যে চীনের উদীয়মান ভূমিকাকে একটি হুমকি হিসাবে দেখবে; তবুও ওয়াশিংটনের উচিত আঞ্চলিক খেলোয়াড়রা যেন আমেরিকাকে একটি নেতিবাচক শক্তি হিসেবে না দেখে। কারণ ইতোমধ্যে চীন নমনীয় শান্তির প্রতীক হিসেবে উপস্থিত হয়েছে।
এ ধরনের মধ্যস্থতায় চীনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে কোনো কোনো বিশ্লেষক বিশ্ব বলয়ে দেশটির ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষয়িষ্ণু শক্তির ইঙ্গিত বলে মনে করছেন। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জন অল্টারম্যান বলেন, কোনো লুকোছাপা না করে বেইজিং যে বার্তাটা এখানে পাঠাতে চাইছে, তা হলো- উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী সামরিক শক্তির বিপরীতে চীন এক উদীয়মান এবং শক্তিশালী কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে উপস্থিত হতে চাইছে। অনেক মিডিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের জন্য এই চুক্তিটিকে একটি পরাজয়ের সংকেত হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে সৌদি-ইরানের মিলনকে ইরাক এবং ওমান আশাবাদের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে- যারা পূর্বে আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে সাহায্য করেছিল।
তেহরানভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিয়াকো হোসেইনির মতে, চুক্তিটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি; কিন্তু আরো অনেক ধাপ বাকি আছে। হোসেইনির মতে, চীন চুক্তির বড় বিজয়ী। কারণ এটি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলজুড়ে তার কূটনৈতিক পদচারণার বৈধতাকে শক্তিশালী করেছে। পিয়ারসন লিখেছেন, এই উদ্যোগটি মূলত ওয়াশিংটনকে বিশ্বের পুলিশ হিসেবে স্থানচ্যুত করে দিয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রধান হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা পিটার বেকারও শনিবার একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন- কীভাবে চীন মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ফেলো জেফরি ফেল্টম্যানের ভাষায়, বেইজিংয়ের এই ভূমিকা বাইডেন প্রশাসনের মুখে চপেটাঘাত। এদিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারকে একটি ‘কাক্সিক্ষত ঘটনা’ হিসেবে প্রশংসা করে বলেছে, এটাকে উৎসাহিত এবং সমর্থন করা উচিত। এই ঐক্য ও সমঝোতা হলো এই অঞ্চলের দেশগুলোর আকাক্সক্ষা।
হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্তকে ‘সতর্ক ভাষায়’ স্বাগত জানালেও এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন এটি টিকবে কিনা।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কার্বি বলেছেন, ইরান তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করবে কিনা, সেটা দেখতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এবং সৌদি আরবের দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হিসেবে দেখা হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলকে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বহু দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখতে পেরেছে, সেক্ষেত্রে ইরান-সৌদি দ্ব›দ্ব মারাত্মকভাবে সহায়ক হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলও এই দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে ‘শত্রুর শত্রু আমাদের মিত্র’ নীতি অনুসরণ করে ইরানের বৈরী কিছু উপসাগরীয় দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। মধ্যপ্রাচ্যে বহু দশক ধরে সব ধরনের সংঘাতে রেফারির ভূমিকায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন তাদের সেই প্রভাব বলয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যেভাবে চীন ঢুকে পড়ছে, সেটি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের জন্য সাংঘাতিক শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বারাক ওবামা প্রশাসনের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ড্যানিয়েল রাসেল বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ভবিষ্যতে আমরা কী দেখব? চীনের প্রেসিডেন্ট শি যখন মস্কো সফর করবেন, তখন সেখানে রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতার যে চেষ্টা চীন করবে- এটা কি তার পূর্বাভাস?
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post