বক্স অফিসে ঝড় তোলা কেজিএফ সিনেমার কারণে সবার কাছেই বেশ পরিচিত হয়ে উঠে কেজিএফ নামক জায়গাটি। তবে কেবল সিনেমাতেই নয়, স্বর্ণের খনিটির অস্তিত্ব বাস্তবেই আছে! ভারতের এক সময়ের সবচেয়ে বড় এবং সমৃদ্ধ সোনার খনি ছিলো কোলার গোল্ড ফিল্ডস বা কেজিএফ। যা কর্নাটকের বেঙ্গালুরু শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে কোলার জেলায় অবস্থিত। প্রায় দুই হাজার বছর আগেই এখান থেকে স্বর্ণ উত্তোলিত হয়ে আসছে। দক্ষিণ ভারতীয় শাসকদের আয়ের প্রধান উৎসই ছিলো এই খনি।
অনেকের মতে, শহরটিতে সোনার ভান্ডার এতটাই সুবিশাল ছিল যে হাত দিয়ে মাটি খুঁড়লেও সোনা পেতেন স্থানীয় মানুষ। কেজিএফে বহুবার এলাকাটিকে ‘ভুতুড়ে’ বলে উল্লেখ করতে দেখা গিয়েছে। তেমনি এর বাস্তব কাহিনীতেও ভুতুরের মত পরিস্থিতি ছিলো বলে জানা যায়। অঞ্চলটিতে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের জীবন অনেক কঠিন ছিল। ফলে আশেপাশের এলাকা থেকে বহু শ্রমিক অনিচ্ছা সত্ত্বেও খনিতে কাজ করতে আসতেন। একাধিক পরিবারকে একটি ছোট শেডে থাকতে হতো সেখানে।
কেজিএফ সিনেমায় দেখা যায় নায়ক ‘রকি’ সাহায্যের মাধ্যমে হাজারো মানুষের কাছে হিরো হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু বাস্তব কেজিএফে রকির মতো কোনো চরিত্র আজও মেলেনি। কোলার গোল্ড ফিল্ডসের আয়তন ৫৮ বর্গকিলোমিটারের বেশি। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতেই এখানে খনন শুরু হয়। যার ফলে এটিকে বলা হয় ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন স্বর্ণখনি।
একসময় এই খনিতে ৩০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক দিনরাত পরিশ্রম করে সোনা আহরণ করতেন। ১৯০২ সাল পর্যন্ত ভারতের ৯৫ শতাংশ সোনা কেজিএফ থেকে তোলা সম্ভব হয়েছিল। গোটা বিশ্বে ভারত তখন সোনা উৎপাদনে ষষ্ঠ স্থানে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু প্রাপ্ত স্বর্ণের দামের চেয়ে খননের খরচ ক্রমেই বেড়ে যায়, ফলে প্রচুর লোকসানের মুখে পড়ে কেজিএফ। যার কারণে একটা সময়, অর্থাৎ ২০০১ সালে বন্ধ হয়ে যায় ‘কোলার গোল্ড ফিল্ড’। এ ছাড়া বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, এই খনি থেকে ১২০ বছরে স্বর্ণ উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ কেজি। ব্রিটিশরা অঞ্চলটিতে বসতি স্থাপনের আগে স্থানীয়রা হাত দিয়ে মাটি খুঁড়েই ৫৬ কেজি সোনা পেয়েছিলেন! এখনও এই এলাকাতে অনেক সোনা মজুত আছে বলে মনে করেন তারা।
কোলার ছিল ভারতের প্রথম শহর যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছিল। শুধু ভারতে নয়, জাপানের টোকিওর পর কোলারই ছিল এশিয়ার দ্বিতীয় শহর যেখানে বিদ্যুতের সুবিধা মিলেছিল। কিন্তু খনির কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চলে যায় এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে আলোকজ্জ্বল এ শহর স্বর্ণের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিতি পেলেও তা এখন ভূতুড়ে একটি স্থানে পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল কেজিএফ : চ্যাপ্টার ওয়ান। এর পর চলতি বছর মুক্তি পেয়েছিলো এর দ্বিতীয় পর্ব। দু’টি সিনেমারই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কন্নড় অভিনেতা যশ। মুক্তির পর শুধু ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এটি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post