বিশ্বজুড়ে নানা দেশে যখন দীর্ঘস্থায়ী শাসকদের স্বৈরাচারী, একনায়ক আখ্যা দিয়ে ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামানো হচ্ছে, তখন বেশ নীরবেই শাসনের সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ করে এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যান ওমানের সাবেক সুলতান কাবুস বিন সাঈদ। মাত্র ২৯ বছর বয়সে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পিতা সাঈদ বিন তাইমুরকে সরিয়ে ১৯৭০ সালে সুলতান হয়ে বসেন কাবুস।
সুলতান কাবুস যখন ওমানের সিংহাসনে আরোহন করেন তখন দেশটিতে মাত্র ১০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা আর তিনটি স্কুল ছিল। কৃষক আর জেলেদের দেশ হিসেবে পরিচিত ওমানে তখন অবকাঠামো বলতে তেমন কিছু ছিল না। বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ওমান তখন দারিদ্র্য পীড়িত একটি দেশ।
একটা হসপিটাল তো দূরের কথা, ভালো মানের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ছিলোনা সেসময়। খেজুর পাতার ঘরে বসবাস করতো ওমানিরা। কিন্তু সেই গরিব ওমান আজ আরব বিশ্বের একটি আধুনিক ধনি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। উন্নত অবকাঠামো আর নাগরিকদের স্বচ্ছল জীবন যাপনের জন্য ওমান অন্যতম সুখী আর শান্তিপূর্ণ একটি দেশ। ওমানের আজকের যত পরিচিতি তার মুলে রয়েছেন সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ।
অশিক্ষিত জনগণকে শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে তিনি মনোযোগ দিলেন শিক্ষায়। গড়ে তুলতে লাগলেন দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের অবকাঠামো। তেলের আয় দিয়ে গড়তে লাগলেন রাস্তা ঘাট, নদী বন্দর, বিমান বন্দর, হাসপাতালসহ নানা ধরনের রাষ্ট্রীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুৎ, টেলিকমিউনিকেশনসহ সব দিক দিয়ে দেশকে একটি শক্ত অবকাঠামো ও ভিত্তির ওপর দাড় করালেন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও তিনি উৎসাহিত করলেন । ফলে গড়ে উঠতে লাগল ব্যাংক, হোটেল, ইনস্যুরেন্স, পর্যটন অবকাঠামোসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান।
কাবুস অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন করেছেন, তেমনি দেশের পুরনো অনেক রীতিনীতিও পাল্টে দেন। দাসপ্রথা উচ্ছেদ করেন। রক্ষণশীল বৃত্ত ভেঙে জনগণকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেন তিনি। আবার নিজেদের পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি রচনা করেন নতুন এক ধারার।
বিশ্ব দরবারে একটি উদার, আধুনিক ও ধনি রাষ্ট্র হিসেবে ওমানের নাম লিখিয়ে ৭৯ বছর বয়সে ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর আলোচনায় আসেন আরব বিশ্বের নিভৃতে থাকা এ শাসক। তার মৃত্যুতে শুধুমাত্র ওমানের নাগরিকই কেঁদেছে ব্যাপারটা এমন নয়। দেশটিতে বসবাসরত সকল প্রবাসীরাই কেঁদেছিলো।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post