মুসলিম বিশ্বের রাজধানী সিরিয়ার দামেস্ক থেকে ইরাকে স্থানান্তরিত হয় আব্বাসীয় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর। আব্বাসীয় খেলাফতের রাজধানী শহরগুলো দজলা, ফোরাত ও পারস্য উপসাগরের নিকটবর্তী ছিল। ফলে আব্বাসীয় খলিফারা সহজেই প্রাচ্যের সঙ্গে সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। ১৫২ হিজরিতে খলিফা মানসুর দজলা নদীর তীরে বাগদাদ নগরী প্রতিষ্ঠা করেন।
রাজধানী শহরের স্থান নির্বাচনে তিনি নৌপথে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়। ঐতিহাসিক ইয়াকুবি বলেন, ‘মানসুর স্থানটি নির্বাচন করেছিলেন। কারণ হলো এটা সত্যিকার অর্থে দজলা ও ফোরাত নদীর মধ্যবর্তী একটি দ্বীপ। পূর্বে দজলা আর পশ্চিমে ফোরাত, এ দুটি গোটা পৃথিবীর ঘাট। ’
মূলত আব্বাসীয় আমলে আরবদের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। সামরিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আরবরা ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠে। ফলে আব্বাসীয় খেলাফতের বিভিন্ন প্রান্তে নৌবন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে ওঠে। নিম্নে আব্বাসীয় আমলের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নৌবন্দরের পরিচয় তুলে ধরা হলো।
১. বসরা : আব্বাসীয় আমলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত নৌবন্দর ছিল বসরা। বিশেষত বাগদাদে যাতায়াতকারী জাহাজগুলো বসরায় অবস্থান করত। এ ছাড়াও তুর্কিস্তান, সাস ও ফারগানার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান নৌবন্দর।
২. ওবুল্লা : ওবুল্লা আব্বাসীয় আমলের সবচেয়ে প্রাচীন নৌবন্দর। চীন থেকে আগত জাহাজগুলো ওবুল্লাতে অবস্থান করত। এটাই ছিল আব্বাসীয় আমলের প্রধান নৌবন্দর।
৩. সিরাফ : তৃতীয় হিজরি শতকে পারস্য উপসাগরের তীরে সিরাফ বন্দর স্থাপন করা হয়। চীন ও ভারতে চলাচলকারী জাহাজগুলো এখানে ভিড়ত।
৪. এডেন : ইয়েমেনের এডেন পৃথিবীর প্রাচীন বন্দরগুলোর একটি। প্রাচীনকালেই এখানে বসতি গড়ে উঠেছিল। আব্বাসীয় আমলে এই বন্দরের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পায়। ঐতিহাসিক ইয়াকুবি বলেন, এডেন সানার বন্দর। আবিসিনিয়া, মানদাহ, জেদ্দা, সিলেট (আসাম) ও চীন থেকে আগত জাহাজ এখানে নোঙর করে। ’
৫. সুহার : সুহার ছিল ওমানের বন্দর ও রাজধানী। ঐতিহাসিক বাশশারি বলেন, চীন (আরব) সাগরের পাড়ে এর থেকে বড় কোনো শহর নেই। অতি জনবহুল ও সুন্দর জায়গা এটি। সম্পদ ও ফলমূলে পরিপূর্ণ। এখানে মিষ্টি পানির খাল আছে। এটা হচ্ছে চীনের দরজা ও প্রাচ্যের ধনভাণ্ডার এবং ইয়েমেনের বাণিজ্যকেন্দ্র।
৬. শিহর : মাছ ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল শিহর নৌবন্দর। এখান থেকে ইরাক, ওমান ও ইয়েমেনের বিস্তৃত অঞ্চলে মাছ রপ্তানি করা হতো।
৭. কায়স : ওমান সাগরে অবস্থিত বাহরাইনের একটি প্রাচীন দ্বীপ ও বন্দর। ভারতগামী জাহাজ এখানে যাত্রা বিরতি করত।
৮. বাহরাইন : প্রাচীনকাল থেকে বাহরাইন নাবিকদের বসবাসের স্থান। আব্বাসীয় আমলে বাহরাইনের এত উন্নতি হয়েছিল যে সেখানে সব সময় এক হাজার ছোট-বড় নৌকা ও জাহাজ থাকত।
৯. হরমুজ : পারস্য উপসাগরের এই দ্বীপ ও বন্দরটি কায়সের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করত। ভারত, চীন ও ইয়েমেনের বাণিজ্য জাহাজ এখানে থামত।
১০. জেদ্দা : আরব উপদ্বীপের সঙ্গে আফ্রিকা মহাদেশের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল জেদ্দা। ইসলাম-পূর্ব সময় থেকে এই বন্দরের ব্যবহার ছিল। ইসলাম আগমনের পর জেদ্দা বন্দরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। মক্কার মুশরিকদের অত্যাচারে মুসলিমরা হাবশায় হিজরত করার সময় জেদ্দা বন্দর ব্যবহার করেছিল।
১১. কুলজুম : লোহিত সাগরেরপারে মিসরীয় উপকূলের কাছেই ছিল প্রাচীন কুলজুম বন্দর। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি বন্দর ছিল। ঐতিহাসিক ইয়াকুবি বলেন, ‘সাগরপারের এটি বড় শহর। যেসব ব্যবসায়ী মিসর থেকে হিজাজ ও ইয়েমেনে খাদ্যশস্য রপ্তানি করে, তারা এখানে থাকেন। ’
১২. আইলাহ : প্রাচীন আইলা বন্দরের বর্তমান নাম আকাবা। এটি ছিল কুলজুম বন্দরের নিকটবর্তী সিরীয় বন্দর। বহু দেশের ব্যবসায়ীরা এখানে একত্র হতো। মিসর, সিরিয়া ও উত্তর আফ্রিকার হজযাত্রীরা এখানে একত্র হতো।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post