চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রথম দুই মাস ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছে, অথচ এর পরের তিন মাস ধরে আটকে আছে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে, প্রথম পাঁচ মাসে এভাবেই রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এ অবস্থায় প্রবাসী আয় বাড়াতে সচেতন করা হচ্ছে প্রবাসীদের; বন্ধ করা হচ্ছে মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসসহ হুন্ডির সব পথ। এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কিন্তু এমন কী ঘটেছে সেপ্টেম্বরে, যে কারণে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না রেমিট্যান্স?
বিদেশি ঋণ, রফতানি ও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়–মূলত এই তিন পথেই কোনো দেশে আসে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রা। তবে, একমাত্র রেমিট্যান্স থেকে পাওয়া অর্থের সবটুকুই সরাসরি বাড়ায় রিজার্ভের আকার। কারণ, বাকিগুলোর মতো এখানে থাকে না কোনো লাভক্ষতি আর দায়দেনার জটিল হিসাব। তাই বৈদেশিক মুদ্রার জোগানে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্স।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে প্রায় ২১০ কোটি ডলার, যা ১৪ মাসে সর্বোচ্চ। পরের মাসে কিছুটা কমলেও তা থাকে ২০০ কোটি ডলারের ওপরই। কিন্তু সেপ্টেম্বরে নেমে আসে ১৫৪ কোটি ডলারে। আরও কমে অক্টোবরে। নভেম্বরে কিছুটা বাড়লেও থেকেছে এর আশপাশেই।
দিনভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, হঠাৎ মন্দার কবলে পড়া সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছে গড়ে ৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। অথচ পরের ১৪ দিনে এসেছে ৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার করে; আরও কমে পরের ৮ দিনে এসেছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার করে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এমন কী ঘটল, যার ফলে একটা ঊর্ধ্বগতির রেমিট্যান্স হঠাৎ করে নিচে নেমে গেল এবং ওখানে থেমে গেল?
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) গত ১১ সেপ্টেম্বর ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে ১০৮ টাকা। আর এই একটি সিদ্ধান্তই রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে বলে দাবি অর্থনীতিবিদদের।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহে একটি ক্যাপ বসিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রবাসীরা ব্যাংক থেকে প্রতি ডলারে পেতেন ১০৮ টাকা, অন্যদিকে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বাসায় গিয়ে এর চেয়ে বেশি দিচ্ছে। এভাবে দাম নির্ধারণ করে মূলত সরু করা হয়েছে ব্যাংকিং চ্যানেল আর প্রশস্ত করা হয়েছে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের পথ।
এ অবস্থায় সব রকমের হুন্ডি বন্ধে নতুনভাবে সরকার কাজ শুরু করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিয়ষক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর বিষয়টি কমে যাচ্ছে। সেটার জন্য বাংলাদেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রবাসীদের জিম্মি করে নয়; বরং প্রতিযোগিতামূলক দামে তাদের অর্থ সংগ্রহে ব্যাংকগুলোকে নিত্যনতুন কৌশল নিয়ে কাজ করার তাগিদ বিশ্লেষকদের।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post