‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ স্লোগান সামনে রেখে ২০২০-২১ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই বলে মত দিয়েছে অভিবাসন খাতের বিভিন্ন সংগঠন। করোনার কারণে সামনের দিনগুলোতে কাজ হারিয়ে যারা ফেরত আসবেন, এমন প্রবাসীসহ পুরো অভিবাসন খাতের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে তারা।
রবিবার (১৪ জুন) অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্ট ১৫টি সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি জানায়। বিবৃতি প্রদানকারী সংগঠনগুলো হলো— ওকাপ, বিএনএসকে, ব্র্যাক, আইআইডি, ওয়ারবী, বমসা, বাসুগ, ইনাফি, কর্মজীবী নারী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), ডেভকম, ইমা, মাইগ্রেশন নিউজ এবং আওয়াজ ফাউন্ডেশন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী সূচক হচ্ছে প্রবাসী আয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ১৩৮ বিলিয়ন টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইতোমধ্যে এক হাজার ৩৮৭ বিলিয়ন টাকা এসেছে। করোনার এই সংকটকালেও প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করেননি। অথচ এই সংকটকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জন্য মাত্র ৬৪১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। সবচেয়ে কম পাওয়া মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে এটি শেষের দিকের একটি। অথচ এই সংকটময় সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা। কাজেই তাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো দরকার ছিল।
আরও পড়ুনঃ ওমানে পুনরায় লকডাউন, ট্রাক চালকদের নতুন নির্দেশনা
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ অভিবাসী কর্মী বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেই কাজ হারিয়ে বাধ্য হচ্ছেন দেশে ফিরে আসতে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, কোভিড-১৯-এর কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত আসতে পারেন। অন্যদিকে, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রায় দেড় লাখ কর্মী বিদেশ যাওয়ার কথা থাকলেও বিশ্বব্যাপী লকডাউন শুরু হওয়ার কারণে তারা যেতে পারেননি। ফলে এসব কর্মী যথেষ্ট শঙ্কা ও অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বিশ্বব্যাংক বলছে, এ বছর কর্মসংস্থান কমবে। বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমবে ২২ শতাংশ। কিন্তু বাজেটে এসব বিবেচনা উঠে আসেনি। এছাড়া চলমান কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের নগদ অনুদান বা সহায়তা প্রদান করা হলেও অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য কোনও সহায়তা বা অনুদান প্রদান করা হয়নি। ফলে অসংখ্য অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবার খাদ্য সংকটসহ কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে।
বিবৃতিতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরে বলা হয়— আমরা অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলো প্রস্তাবিত বাজেটে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মী এবং বিদেশে অবস্থানরত অভিবাসী কর্মীর পরিবারের সদস্যদের জন্য যথাযথ পুনর্বাসন ও টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কয়েকটি দাবি করছি। এগুলো হলো—প্রস্তাবিত জাতীয় নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মী এবং বিদেশে অবস্থানরত অভিবাসী কর্মীর পরিবারের সদস্যদের জন্য কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের যথাযথ পুনর্বাসন ও টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থা নেওয়া, অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপরে বিগত অর্থবছরে ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এই প্রণোদনা বাড়িয়ে চার শতাংশ করা।
আরও দেখুনঃ সুলতান কাবুসের সেই রহস্যময় চিঠিতে কি লেখা ছিল?
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post