আপনি কি ভাবছেন মারা গেলে মানুষ আপনাকে মনে রাখবে? আমরা সচরাচর তাই ভাবি। কিন্তু এটা মহা ভুল ভাবনা আমাদের। বাস্তবতা হচ্ছে, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কান্নার শব্দ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। অন্তিম বিদায় দিতে আসা লোকদের মধ্যে কেউ কেউ ফোনে কারোর সঙ্গে বকবক করতে ব্যস্ত থাকবে। আবার কেউ ফেসবুকে আপনার জানাজার ছবিযুক্ত পোষ্ট দিতে মশগুল থাকবে। আবার দূরে জটলা পাকিয়ে কিছু লোক সংসার, ব্যবসা, খেলা, রাজনীতি এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে থাকবে।
আপনার মৃত্যুতে শোকাহত স্বজনদের খাওয়াতে আর ছেলেমেয়ের দেখাশোনা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে পরিবার। কিছু পুরুষ চা খেতে উশখুশ করবে। ব্যবস্থা নেই দেখে বাইরের দোকানে চলে যাবে। কোনো আত্মীয় বা বন্ধু আপনার ছেলে বা মেয়ের কাছে ফোন করে শোক বার্তা জানাবে। পরের দিন রাতে খাওয়ার পর কিছু আত্মীয়ের সংখ্যা কমে যাবে, কিছু লোক আবার রান্নায় লবণ কম ছিল এই নিয়ে বিরক্ত হবে। আর এভাবেই ধীরেধীরে কমতে থাকবে ভিড়।
পরবর্তী কয়েক দিন আপনার ফোনে কিছু কল আসতে পারে আপনি মারা গেছেন এটা না জানার কারণে। আপনার অফিস, আপনার ব্যবসা আপনার পরিবর্তে কাউকে রাতারাতি খুঁজে নেবে। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আপনার ছেলে, মেয়ে নিজের নিজের পড়াশোনার জগতে, কর্মক্ষেত্রে বা নিজ-নিজ বাসস্থানে চলে যাবে। মাস শেষ হতে না হতেই আপনার জীবনসঙ্গী কোনো কমেডি শো দেখে আবার হাসতে থাকবে। সবার জীবন আবার স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। আপনাকে এই পৃথিবীর মানুষজন আশ্চর্য গতিতে ভুলে যাবে।
এভাবেই একটি বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বেশ ঘটা করে আপনার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হতে পারে। বছর পার হলে আর আপনার সম্পর্কে কথা বলার, আলোচনা করার কেউ থাকবে না। আপনি চিরকালের জন্য মুছে গেলেন। সবার মন থেকেও। সবাই যখন আপনাকে দ্রুত ভোলার প্রতিযোগিতায় লড়ছে, তাহলে আপনি আপনি উন্মাদের মতো কিসের জন্য এতো দৌড়াচ্ছি? কেন এতো চিন্তা করছেন দিন-রাত? আপনি কি এসব করতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন? এটাই কি ছিল আপনার নাতিদীর্ঘ জীবনের আসল লক্ষ্য? আপনি কি আপনার একমাত্র জীবনে পরিবার, পরিজন, আত্মীয়, বন্ধুদের সুখের জন্য, তাদের সন্তুষ্ট করতেই জন্ম নিয়েছিলেন?
বিশ্বাস করুন, কারোর জন্য কোনোদিন কিছু থেমে থাকে না। কিচ্ছু না। আপনি না থাকলেও সব স্বাভাবিক চলবে। কোনো ব্যথাই চিরকালীন নয়। কেউ মনেও রাখে না। জীবন একবারই আসে। তাই স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বাঁচতে শিখুন। সহজ সরল পথে চলুন। মনে রাখবেন, যে বিমানে চরে বিদেশ গেছেন। সেই বিমানে একদিন আপনার মরদেহ আসতে পারে। কোনো একদিন হয়ত এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবো আপনি আমি, ফিরবে না কোনো প্রিয়জন। হারিয়ে যাবে বন্ধন। তাই, প্রবাসে যতটুকু সময় একত্রে কাটানোর সুযোগ পান, সেটা মান, অভিমান ভুলে আনন্দে, শান্তিতে কাটান। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে আসুন সবাই ভালো থাকি।
আরো পড়ুন:
ওমানে সিগারেট সেবনে নতুন নিষেধাজ্ঞা
নোয়াখালীতে ওমান প্রবাসীর স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে ওমান থেকে আনা হচ্ছে এলএনজি
বিদেশগামী কর্মীদের জন্য নতুন নিয়ম চালু করলো সরকার
সৌদিতে কর্মী পাঠাতে জটিলতা, নিতান্তই ভুল বোঝাবোঝি বললেন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post