নিজের ছেলেকে বাঁচাতে বসতভিটা বন্ধক রেখে দালালদের হাতে ২৮ লাখ টাকা তুলে দিয়েও নিজের ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না বাবা হাবিবুর বেপারি। দালালদের নির্মম নির্যাতনে ইতালির একটি হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাদারীপুরের যুবক রফিকুল বেপারি।
রফিকুলের মৃত্যুর খবরে গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহতের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলে আর ঘরে ফিরবে না–এই শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। আহাজারিতে চারপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন পাড়া-প্রতিবেশীরাও।
স্বজনরা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার শ্রীনদী গ্রামের চা-দোকানি হাবিবুর বেপারি তার ছেলে রফিকুল বেপারিকে ইতালি পাঠানোর জন্য আট মাস আগে দালাল আলমগীর খাঁ-র সঙ্গে কথা বলেন। দালালের আশ্বাসে তখনই সাড়ে নয় লাখ টাকা দেয়া হয়। পরে দালাল চক্র লিবিয়ার মাফিয়াদের বন্দিশালায় আটক করে পরিবারকে নির্যাতনের ছবি পাঠিয়ে আদায় করে আরও ১৮ লাখ টাকা।
বসতভিটা বন্ধক, জমিজমা বিক্রি আর সুদে দেনা করে মোট ২৮ লাখ টাকা দালালদের দিলেও টানা ছয় মাস রফিকুলের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। পরে অবস্থা গুরুতর দেখে রফিকুলকে এক সপ্তাহ আগে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠায় দালাল চক্র। আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে ভর্তি করা হয় ইতালির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে মারা যান রফিকুল। এই ঘটনায় জড়িত দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
রফিকুলের বাবা হাবিবুর বেপারি বলেন, ‘আমার ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য প্রথমে সাড়ে ৯ লাখ টাকায় চুক্তি হলেও দালাল আলমগীর খাঁ ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং রফিকুলকে নির্যাতন করে মোট ২৮ লাখ টাকা আদায় করে। এই টাকা ঘরবাড়ি বন্ধক ও সুদে এনে জোগাড় করে দিয়েছি। আমি এখন দেনাদারদের কীভাবে টাকা পরিশোধ করব। আমি সরকারের সহযোগিতা চাই।’
রফিকুলের ফুপু হালিমা বেগম বলেন, ‘একদিকে সন্তানও গেল, অন্যদিকে লাখ লাখ টাকা দেনা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার রাস্তা নাই। এ ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত আলমগীরের বিচার চাই। পাশাপাশি নিহত রফিকুলের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চাই।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, এই ঘটনায় নিহতের পরিবারকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেয়া হবে। স্বজনদের থানায় এসে মামলা করতে বলা হয়েছে। মামলা হলে আসামি ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযুক্ত দালাল আলমগীর খাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। ধুরাইলের দাসেরচর এলাকায় তার বাড়িতে গিয়েও ঘর তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত আলমগীর খাঁ ধুরাইল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দাসেরচর এলাকার লতিফ খাঁর ছেলে।
আরো পড়ুন:
ওমানে সিগারেট সেবনে নতুন নিষেধাজ্ঞা
নোয়াখালীতে ওমান প্রবাসীর স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে ওমান থেকে আনা হচ্ছে এলএনজি
বিদেশগামী কর্মীদের জন্য নতুন নিয়ম চালু করলো সরকার
সৌদিতে কর্মী পাঠাতে জটিলতা, নিতান্তই ভুল বোঝাবোঝি বললেন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post