বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে বেশি শ্রমিক যেত, বর্তমান সময়ে সেইসব দেশ অর্থনৈতিক সংকটে থাকায় কর্মী নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে সেসব দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় কর্মরত কর্মীরা দেশে অর্থ প্রেরণের পরিমাণও কমিয়ে দিচ্ছেন। সামনের দিনগুলোতে অর্থ প্রেরণের পরিমাণ আরো কমবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে চ্যালেঞ্জর মুখে পড়েছে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরব। জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশকে যে কয়টি দেশের উপর নির্ভর করতে হয় এর মধ্যে সৌদি আরব অন্যতম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি দেশের ওপর অতি নির্ভরতা বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে পারে। এছাড়াও বর্তমানে দেশটিতে নতুন যাওয়া প্রবাসীদের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। অধিকাংশ প্রবাসী সেখানে যেয়ে কাজ পাচ্ছেননা এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে স্বল্প বেতনের কর্মীরা আর সেখানে যেতে চাচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, একসময় বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে প্রচুর মহিলা কর্মী গেছেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে নানা অপপ্রচারের কারণে মহিলা কর্মীরা অনেকেই সেখানে যেতে উত্সাহী নন। এর ফলে কর্মী প্রেরণের সংখ্যা মোটের ওপর যেমন কমেছে, সঙ্গে সঙ্গে রেমিট্যান্সেও এর প্রভাব পড়েছে।
একসময় বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানি হতো তার অনেক দেশেই এখন তা বন্ধ আছে। লিবিয়া, কুয়েত, ইরাক, জর্ডান প্রভৃতি দেশে জনশক্তি রপ্তানি একপ্রকার বন্ধ। অথচ একসময় এসব দেশে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি হতো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক। বিএমইটির হিসেবে দেখা যায়, ২০২১ সালে লিবিয়াতে মাত্র তিন জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে। এসময় কুয়েতে গেছে মাত্র ১ হাজার ৮০০ কর্মী। ইরাকে পাঁচ জন কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। জর্ডানেও কর্মী যাওয়া কমেছে।
শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি তেমন উল্লেখ করার মতো নয়। জাপানের সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের চুক্তি হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ কর্মী সেখানে গিয়েছে। অথচ দেশটিতে কর্মী প্রেরণের জন্য ৭০টি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিটি ৩০ লাখ টাকা করে সরকারকে জমা দিয়েছে। দেশটির কৃষিখাতে কাজ করার জন্য নেপাল থেকে কর্মী গেলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অবহেলিত। দক্ষিণ কোরিয়ায় একসময় বাংলাদেশি জনশক্তি প্রচুর গেলেও এখন তা একেবারেই নগণ্য। মালয়েশিয়ায় নানা উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার উম্মুক্ত হলেও আশাতীত সফলতা মিলছে না। লাখ লাখ শ্রমিক যাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজারের মত শ্রমিক গেছেন দেশটিতে। ইউরোপের বাজারেও বাংলাদেশের শ্রমবাজার খুব দুরাবস্থার মধ্যে। একমাত্র ইটালিতে কিছু কর্মী গেলেও বাকি দেশগুলোতে কোনো আশার আলো নেই।
বিদেশে কর্মী প্রেরণের হার কমে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই রেমিট্যান্সে চাপ পড়তে শুরু করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের এই অঙ্ক গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কর্মী প্রেরণের কারণে রেমিট্যান্স কমেছে তা নয়, কর্মীরা যারা সেখানে কাজ করেন তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা দেশে অর্থ কম পাঠাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে, তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সের ওপর। মূলত জনশক্তি রপ্তানিতে কয়েকটি দেশের ওপর নির্ভরতা এবং পুরোনো কয়েকটি শ্রমবাজারে কর্মীর চাহিদা না থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
আরো পড়ুন:
সম্পদের লোভে নিজের মা’কে মারলেন ওমান প্রবাসী
ওমানে নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে ৫ হাজার রিয়াল পুরষ্কার ঘোষণা
ওমানের ইবরিতে গাড়ি দুর্ঘটনায় এক বাংলাদেশি প্রবাসী নিহত
বিমানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার
দালালদের খপ্পরে পড়ে অপহরণের শিকার বাংলাদেশিরা
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post