কুয়েত থেকে তিন বছর পর দেশে ফিরেই অজ্ঞান পার্টির কবলে বগুড়ার প্রবাসী তৌহিদুল ইসলাম। বিদেশ থেকে আনা স্বর্ণালংকার, কুয়েতি দিনারসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার পথে একতা পরিবহনের বাসে ঘটে এ ঘটনা।
ভুক্তভোগীর দাবি বাসের চালক, সুপারভাইজার এবং হেল্পারও ঘটনার সঙ্গে জড়িত। মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গত শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) ভোরে কুয়েত প্রবাসী তৌহিদুল ইসলাম ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে বিমানবন্দর থেকে আসেন উত্তরার আজমপুরের একতা পরিবহনের বাস কাউন্টারে। যাবেন বগুড়ায়।
কাউন্টার থেকে জানানো হয়, এক ব্যক্তি ভুল করে তিনটি টিকিট কেটেছেন, সেখান থেকে একটি তৌহিদুলকে দিতে চান। সরল বিশ্বাসে অন্যের কাটা টিকিটের মূল্য পরিশোধ করে বাসে চড়েন তিনি। পরদিন তৌহিদুল নিজেকে দেখতে পান বগুড়ার একটি হাসপাতালে। পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বিষয়টি ফোনে জানিয়েছিলেন বাসের সুপারভাইজার। সঙ্গে থাকা সবকিছু নিয়ে গেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।
ভুক্তভোগী পরিবারের এক সদস্য সময় সংবাদকে বলেন, যখন তার (ভাইয়ের) ফোন বন্ধ পাই। তখন আমরা টেনশনে পড়ে যাই। পরে ফোনে হয়তো চার্জ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যে মানুষটা কিছুক্ষণ পর ফোন দিচ্ছিল তার ফোন বন্ধ কেন। পরে সকাল ১০টার দিকে বাসার একটা নম্বরে কল আসে রিসিভ করার পর একতা গাড়ির সুপারভাইজার বলে পরিচয় দেন। বলেন, তোমাদের কেউ কি বিদেশফেরত আসতেছে কি না, বললাম হ্যাঁ। পরে বলেন, তিনি গাড়ির ভেতরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। তখন বললাম, কোন জায়গায় আছেন, বলে গাড়ির ভেতরে আছেন। আমি বললাম, গাড়ি তো বগুড়ায় আসতেছে, বলে হ্যাঁ। পরে আমি বলি কষ্ট করে বগুড়া পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারেন। আমরা নিয়ে নেব।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কাউন্টার থেকেই কুয়েত প্রবাসী তৌহিদুলকে অনুসরণ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। লাল টি-শার্ট পরা এই ব্যক্তিসহ কয়েকজনের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ করা যায়। কথা বলতে দেখা যায় প্রাইভাটকারের চালক এবং তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গেও। কথা হয় ভুক্তভোগীর সঙ্গে। তিনি জানান, তার পাশের এবং পেছনের সিটেই বসেছিলেন অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাদেরকে শনাক্তও করেছেন তিনি।
ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনটা চেইন ছিল। দুইটা ৪৬ গ্রাম, আরেকটা ২২ গ্রাম। একটা আংটি ১১ গ্রাম, চেইন ছিল ৭ গ্রাম। দুটি রিং ৭ গ্রাম, আরেকটা রিং ৪ গ্রাম। মোট অন্য জিনিসসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ অর্থ লুট হয়ে গেছে। পুলিশ বলছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত করছেন তারা।
মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, একতা পরিবহনের ড্রাইভার, হেলপার, সুপারভাইজারও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সেটা আমরা তদন্ত করছি। এদিকে চলতি পথে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া খাবার না খাওয়ার পরামর্শ পুলিশের।
আরো পড়ুন:
ছুটিতে দেশে এসে সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু
বেড়েছে প্রবাসী আয়, রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলার
হুন্ডিতে টাকা নিলে বিপদে পড়বেন প্রবাসীর স্বজন
মৃত্যুকূপ পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছেছে ৩৮ বাংলাদেশি
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post