সৌদি আরব সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের সহযোগী বাদের আল-আসাকার। টুইটারে সৌদি সরকারবিরোধী মতামত প্রকাশ করা নানা অ্যাকাউন্টের তথ্য পেতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের অর্থ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এরপরও তাঁর অ্যাকাউন্টটি সচল রেখেছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। ভেরিফায়েড আসাকারের ওই অ্যাকাউন্টের ২০ লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত গত মঙ্গলবার আহমাদ আবুয়াম্মো নামের টুইটারের সাবেক এক কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। টুইটারে কাজ করার সময় তিনি সৌদি সরকারের কাছে যোগাযোগমাধ্যমটি ব্যবহারকারীদের তথ্য ফাঁস করতেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছিল। আবুয়াম্মো লেবানিজ বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
ওই মামলার অপর দুই আসামি আলি আলজাবারাহ ও আহমাদ আলমুতাইরি সৌদি আরবের নাগরিক। দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন। দুজনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। ধারণা করা হয়, আলজাবারাহ ও আলমুতাইরি এ মুহূর্তে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
এদিকে আবুয়াম্মোর মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে রায়ের পর তথ্য ফাঁসের ঘটনায় টুইটারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও যুবরাজ সালমানের সহযোগী আসাকারের অ্যাকাউন্ট টুইটার কর্তৃপক্ষ কেন এখনো সচল রেখেছে, তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। ২০১৫ সালে টুইটারের তথ্য ফাঁসের একটি ঘটনায় সৌদি সরকার কাঙ্ক্ষিত তথ্য হাতে পায়। সৌদি সরকারের সমালোচনা করা বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট কারা চালান, তা শনাক্ত করে তারা। এরপর আবদুল রহমান আল-সাদহান নামের এক ব্যক্তিকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেন সৌদি আরবের একটি আদালত।
আবদুল রহমান আল-সাদহানের বিরুদ্ধে একটি বেনামি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে সৌদি সরকারকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করার অভিযোগ ছিল। মনে করা হয়, ২০১৫ সালে ফাঁস হওয়া তথ্য থেকেই তাঁর পরিচয় জেনেছিল সৌদি আরব। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি টুইটার কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আসাকারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। তবে ২০২০ সালের জুলাইয়ে দায়ের করা একটি অভিযোগপত্রে ৫৩ বার আসাকারের কথা এসেছিল, যদিও তাঁর নাম সরাসরি না এনে ‘বিদেশি কর্মকর্তা-১’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই অভিযোগপত্রটি বিচার পর্যন্ত গড়ায়নি। অপর দিকে আবুয়াম্মোর মামলার শুনানির সময় আসাকারের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, তিনি এ যড়যন্ত্রের মূলে রয়েছেন।
মার্কিন প্রসিকিউটরদের ভাষ্যমতে, মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি যুবরাজ হওয়ার আগে থেকেই তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ের প্রধান ছিলেন আসাকার। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে কৌঁসুলিরা অভিযোগ আনেন, সৌদি সরকারের স্বার্থ উদ্ধারে টুইটার ব্যবহারকারীদের গোপন তথ্য হাতিয়ে নিতে তৎপর ছিলেন আসাকার। এ জন্য আবুয়াম্মো ও আলজাবারাহকে উপহার, অর্থ, এমনকি ভবিষ্যতে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া লেবাননে আবুয়াম্মোর বাবার নামে খোলা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিন লাখ ডলারও জমা করেছিলেন এই সৌদি কর্মকর্তা।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী অ্যাটর্নি কলিন স্যাম্পসন বলেন, আসাকার একজন গুপ্তচর নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে উপহার হিসেবে একটি ঘড়ি পেয়ে আবুয়াম্মো সৌদি শাসকদের সমালোচনাকারী বেনামি একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। এদিকে ২০২০ সালে দায়ের করা ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৪ মে আলজাবারাহ ও আলমুতাইরির সঙ্গে দেখা করেছিলেন আসাকার। তখন সৌদি সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন আসাকার ও যুবরাজ সালমান।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে আলমুতাইরির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে। সেখানে শেয়ার করা একটি ছবিতে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ১৪ মে যুবরাজের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন তিনি। সাক্ষাৎটি হয়েছিল ওয়াশিংটনের কাছেই ভার্জিনিয়ার টাইসনস কর্নারের রিটজ-কার্লটন হোটেলে। আলমুতাইরির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ নভেম্বর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল ম্যাচে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, এর কয়েক দিন বাদেই আলজাবারাহ যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহরে ফেরেন। এরপর তিনি টুইটারের কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করা শুরু করেন। সেখান থেকে কয়েক ডজন টুইটার ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেন। ওই ব্যবহারকারীদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন, যাঁরা সৌদি সরকার ও যুবরাজ সালমানের জন্য বিব্রতকর তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। ওই তথ্য পরে আসাকারের কাছে পাঠানো হয়।
এফবিআই বলছে, তারা আলমুতাইরি সম্পর্কে তথ্যের সন্ধানে রয়েছে। তবে তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ইঙ্গিত দেয়, মাত্র কয়েক দিন আগেই তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। সাধারণ মানুষের মতোই জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। আসাকারের অ্যাকাউন্ট এখনো সচল কেন, এমন প্রশ্নের জবাব দেয়নি টুইটার কর্তৃপক্ষ। তবে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, ব্যবহারকারীদের তথ্যে অনুপ্রবেশের ঘটনা বুঝতে পারার পর এর সুরাহা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল টুইটার।
টুইটার কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, কোনো দেশের শাসকদের অপব্যবহারের হাত থেকে টুইটার ব্যবহারকারীদের তথ্যের সুরক্ষা দিতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে সৌদি আরব–সংশ্লিষ্ট প্রায় ৬ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় টুইটার কর্তৃপক্ষ। ওই অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধে টুইটারের নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
পরে ২০২০ সালে এসে সৌদি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা আরও ৩৩টি অ্যাকাউন্ট বন্ধের কথা জানায় টুইটার। বলা হয়, ভুয়া ওই অ্যাকাউন্টগুলো কাতারের সরকারি কর্মকর্তাদের নামে খোলা হয়েছিল। সেগুলো দিয়ে সৌদি আরবের পক্ষে নানা বক্তব্য দেওয়া হতো।
আরো পড়ুন:
কাতার যাওয়ার পথে মারা গেলেন হাদিউল হক
বাংলাদেশকে ১৮ টি দামী ঘোড়া উপহার দিলো কাতার
বিমানবন্দরে প্রবাসীকে চর মারার ঘটনায় কাস্টম কর্মকর্তা বরখাস্ত
ওমানে আবহাওয়া নিয়ে ভুল তথ্য দিলে ৫০ হাজার রিয়াল জরিমানা!
ওমানে যুগান্তকারী আইন, স্পন্সর ছাড়াই ব্যবসা করতে পারবে প্রবাসীরা
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post