মনির শেখের মৃত্যুর এক বছর হবে চলতি মাসের ৩০ তারিখ। গত বছর সৌদি আরবের আল কাসিম প্রদেশে মেস বাসায় মারা যান মনির। মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর ৪ আগস্ট দেশে ফিরেছে প্রবাসী এই শ্রমিকের মরদেহ। সৌদি আরবের আল কাসিম প্রদেশের বুরাইদাহ শহর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার রাতে দেশে আনা হয় তাঁর মরদেহবাহী কফিন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাতে মরদেহ বুঝে নেন মনিরের স্বজনেরা। মরদেহ খুলনার তেরখাদায় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় শুক্রবার সকালে।
তেরখাদা ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন হয় মনির শেখের মরদেহ। এক বছর ধরে বিদেশে হিমঘরে থাকা মরদেহটি শেষবারের মতো দেখতে পেয়েছেন স্ত্রী-সন্তানেরা। জানাজায় উপস্থিত হয়েছেন তেরখাদার চেনা-অচেনা অনেক মানুষ। মনির শেখের বৃদ্ধ বাবা হামিদ শেখ কোনো কথা বলেননি। সন্তানের জন্য দুই হাত তুলে মোনাজাত করে অঝোরে কেঁদেছেন। সন্তানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে এক বছর ধরে বাক্শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন এই বাবা।
রেমিট্যান্স যোদ্ধা যাঁদের বলা হয়, তেমন একজন শ্রমিকের মরদেহ এক বছর ধরে বিদেশে থাকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ৯০ দিনের ‘ফ্রি ভিসায়’ সৌদি আরব যাওয়ায় মনির শেখের মরদেহ দেশে পাঠানো নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের দায় ছিল না। এদিকে মৃত্যুর খবরের পর খুলনার তেরখাদার উত্তরপাড়ার এ পরিবারটি বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় বা দূতাবাসে যায়নি।
আরো পড়ুন: ভিডিও কলে কথা বলা শেষে সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু, লাশের খোঁজে বছর পার
৩ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মনির শেখর মরদেহ দেশে আনার প্রক্রিয়া কয়েক মাস ধরেই চলছে। এ বছরের মে মাসে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রথম জানতে পারে, মরদেহটি এখনো দেশে পাঠানো হয়নি। দূতাবাসের পক্ষ থেকে কফিলের (সৌদি আরবের নিয়োগকর্তা) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি সাড়া দেননি। ফলে দূতাবাসের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁর অনলাইন আইডি ব্লক করে দেয়। সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে কফিলের কাছ থেকে মর্গ ফি বাবদ ৬ হাজার সৌদি রিয়াল আদায় করে পুলিশ। কফিলের পক্ষ থেকে বাকি টাকা দেওয়ার জন্য সময় চাওয়ায় মরদেহটি হিমঘরে রাখার সময় দীর্ঘায়িত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাকি ৭ হাজার রিয়াল পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাসকেই। মনির শেখের মরদেহ বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনার খবর নিশ্চিত করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
এক বছর তিন মাসের মধ্যে কেউ দাবি না জানালে সৌদি সরকার সাধারণত বেওয়ারিশ হিসেবে মরদেহ দাফন করে বা কোনো মেডিকেল কলেজকে দান করে দেয়। ফলে মনির শেখের মরদেহ পরিবারের পক্ষ থেকে খুঁজে পাওয়ার জন্য সময় ছিল আর মাত্র তিন মাস। সাধারণত প্রবাসী শ্রমিকের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে পরিবারের যে অর্থ পাওয়ার কথা, তা এ পরিবার পাবে না। স্বাভাবিক মৃত্যুর কারণে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল’ থেকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা রয়েছে।
এক বছর ধরে পরিবারটির হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে মনির শেখের ভাইদের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছিলেন তেরখাদা সরকারি নর্থ খুলনা কলেজের শিক্ষক রবিউল ইসলাম রাজু। তিনি বলেন, মনির শেখের মেজ মেয়ে মিলিনা অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। তিন সন্তানকে পড়ালেখা করানো সম্ভব হলে একদিন হয়তো পরিবারটি স্বনির্ভর হতে পারবে। এক বছর পর স্বামীর মরদেহ দাফনের পর মনির শেখের স্ত্রী জেছমিন বেগম অনুরোধ করেন, তাঁর সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও যেন পাওনা টাকাটা যত দ্রুত সম্ভব বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
প্রবাসীদের কাছ থেকে বেশি দামে ডলার কিনছে ব্যাংক
কর্মী নেওয়া বন্ধ ঘোষণা করল মালয়েশিয়া!
সিলেটে উদ্ধার করা প্রবাসী পরিবারে আরেক জনের মৃত্যু
ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোকে স্বাগত জানালো ওমান
ওমানে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ জন আহত
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post