কাবাঘর নির্মাণের সূচনা থেকে চলছে নিয়মিত তাওয়াফ। প্রতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলমানগণ হজ ও ওমরাহ উপলক্ষে এসে কাবা শরিফ তাওয়াফ করেন। আমরা সবাই জানি, তাওয়াফ করতে সাতবার ডান থেকে বামে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে কাবা ঘরের চার দিকে প্রদক্ষিণ করতে হয়। এখন প্রশ্ন হলো তাওয়াফ কেন এই কাবা শরিফকে ঘিরে এবং কেনই ঘড়ির কাটার বিপরীতে ?
কাবার নিচের মাটিই পৃথিবীর স্থলভাগের প্রথম মাটি। মাটিতে রূপান্তর হওয়ার আগে কাবা সাদা ফেনা আকারে ছিল। হাদিসের ভাষ্য মতে, কাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন। বিশাল সাগরের মাঝে এর সৃষ্টি। ধীরে ধীরে এর চার পাশ ভরাট হতে থাকে।
ইমাম বাগাবি বলেন, কাবাঘর নির্মাণ করার পর আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম আ: কে নির্দেশ দেন, মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দাও যে, বায়তুল্লাহর হজ তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। ইবনে আবি হাতেম ও হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণনা করা হয়, হজরত ইব্রাহিম আ: আবু কুবায়স পাহাড়ে আরোহণ করে দুই কানে অঙ্গুলি রেখে ডানে-বাঁয়ে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ করে চিৎকার করে ঘোষণা করেন, ‘হে মানুষেরা! আল্লাহ তোমাদের এই ঘরে হজ করার নির্দেশ করেছেন, যাতে তোমাদেরকে জান্নাত দিতে পারেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে পারেন। সুতরাং তোমরা হজ করো।’
কাবা হলো বায়তুল মামুরের আদলে পৃথিবীতে নির্মিত পবিত্র ইবাদত ঘর। সপ্ত আসমানের ওপরে বায়তুল মামুর নামক একটা মসজিদ আছে যেখানে ফেরেশতারা নিয়মিত তাওয়াফ করে থাকে। আর কাবাঘর হলো, বায়তুল মামুরের ঠিক সোজাসুজি নিচে। কিন্তু দুনিয়ার জীবনে যেহেতু আল্লাহর আরশকে সামনে পাওয়া সম্ভবনা, তাইমুসলমানরা এই কাবাঘরের চার পাশে একসাথে তাওয়াফ করেন। কারণ, কাবাঘর হচ্ছে দুনিয়ায় বায়তুল মামুরের প্রতিনিধি।
উম্মতে মুহাম্মদির জন্য আল্লাহ চান বিশ্ব মুসলিমের জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিরাপদ ইবাদত স্থান ও শান্তিময় মিলনকেন্দ্র হোক যেখানে বিশ্ব মুসলিমগণ তাদের পূর্বপুরুষগণের ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিয়মিত একত্র হবেন। আর সেই স্থানটি ই হলো পবিত্র কা’বা শরিফ।
আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন, সমগ্র বিশ্ব মানবতার জন্য প্রথম ইবাদতগৃহ কাবাঘর। এই পবিত্র ঘরকেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত হেদায়াত পেতে পারে। সূরা আলে- ইমরান-এর ৯৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ইবাদত গৃহটি নির্মিত হয় সেটি মক্কায় অবস্থিত। তাকে কল্যাণ ও বরকত দান করা হয়েছিল এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াতের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছিল।
হজে তাওয়াফ তিনটি ফরজের একটি। এই ফরজ হওয়ার প্রাকৃতিক কারণ যেমন আছে তেমনি আছে অন্তর্নিহিত তাৎপর্যও। কাবায় হজ এবং তাওয়াফের ঘোষণা মানবসৃষ্টির সূচনা থেকে। আবার নির্দিষ্ট অক্ষের চার দিকে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুর ভেতরে-বাইরে ঘূর্ণনও সৃষ্টির সূচনা থেকে। এর মাধ্যমে আল্লাহ যেমন সৃষ্টির সূচনালগ্নের অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চান; পাশাপাশি প্রতীকী তাওয়াফের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চান, মুসলমানেরা যেন সব সময় এই কাবাঘরের প্রভুকে কেন্দ্র করেই তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
আরো পড়ুন:
কাতারে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রবাসীর মৃত্যু
মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর
বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্থাপনা মসজিদে হারাম
ওমান সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বাবা-ছেলের মৃত্যু
ওমানে সেলফি তুলতে তুলতে মারা গেলেন দুই পর্যটক
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post