পৃথিবী থেকে প্রায় দশ লাখ মাইল উপর থেকে মহাবিশ্বের ছবি তুলে তাক লাগিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। গহীন অন্ধকারের এই ছবি পৃথিবী জন্মেরও আগের। অর্থাৎ আজ থেকে ৪৬০ কোটি বছর আগের দৃশ্য। সদ্য প্রকাশিত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে ৪৬০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের এই ছবি প্রকাশ করে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার দেওয়া তথ্যমতে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা যতগুলো গ্রহের আবিষ্কার করেছে, তার মধ্যে পৃথিবী বালুকণার চেয়েও ক্ষুদ্র। অর্থাৎ ওইসব গ্রহ এতটাই আয়তনে বড় যে, তার কাছে গোটা পৃথিবী বালু কনার চেয়েও ক্ষুদ্র! সৃষ্টিকর্তার এমন সব সৃষ্টি নিঃসন্দেহে তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে।
ধর্মীয় আলেমগন বলেন, মহান আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্ব বিশ্লেষণ অনেক বড় ইবাদত। পবিত্র কোরআনে মানুষকে আল্লাহ্র সৃষ্টি ও আশপাশের সৃষ্টি জগতের প্রতি অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর পবিত্র কোরআন এ জন্য অদ্বিতীয় নির্ভরযোগ্য উৎস। চলুন দেখি মহাগ্রন্থ আল কোরআনে মহাকাশ বিষয়ক কী কী বিস্ময়কর তথ্য রয়েছে। অর্থাৎ আজ বিজ্ঞানীরা যেসব আবিষ্কার করছেন, তা ১৫০০ বছর আগে মহানবী হযরত মোহাম্মাদ সা: এর মাধ্যমে আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এই মহাকাশের কথা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনের সুরা জারিয়াত এর ৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ মহাকাশের কক্ষপথবিশিষ্ট বিষয় নিয়ে বলেন, মহাকাশের ছোট-বড় গ্রহ-উপগ্রহগুলো প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান। সুরা ইয়াসিনের ৩৮,৩৯ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন ‘সূর্য তার নির্ধারিত পথে ছুটে চলে। চাঁদেরও রয়েছে নির্ধারিত কক্ষপথ।’
কক্ষপথতারকাবেষ্টিত মহাকাশ প্রসঙ্গেও পবিত্র কুরআনে আলোচনা এসেছে। মহাকাশবেষ্টিত তারকাগুলো প্রধানত দুই ধরনের। রাতের ঝলমলে আকাশে আমরা যেগুলো মিটমিট করে জ্বলতে দেখি কোরআনের ভাষায় এগুলো ‘কাউকাব’ তথা স্টার শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া মহাকাশে এক ধরনের বৃহৎ আকৃতির তারকা রয়েছে যেগুলো স্বয়ং বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ, উপগ্রহ ও তারকার সমষ্টি। কোরআনের ভাষায় এগুলো ‘বুরুজ’ তথা গ্যালাক্সি শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম প্রকারের বিবরণে পবিত্র কোরআনে সুরা সাফফাত এর ৬ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, আমি দুনিয়ার আকাশ অসংখ্য তারকারাজির দ্বারা সুসজ্জিত করেছি। দ্বিতীয় প্রকার প্রসঙ্গে কোরআনে সুরা ফুরকানের ৬১ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, পবিত্র সেই মহান সত্তা যিনি মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি স্থাপন করেছেন যাতে সূর্য ও আলোকোজ্জ্বল চন্দ্রও স্থাপন করেছি।
আকাশের রং নীল বলে মানুষের মুখে পরিচিত হলেও বাস্তবে আকাশের সুনির্দিষ্ট কোনো রং নেই। বায়ুমণ্ডলের ক্ষুদ্র অণুগুলো দৃষ্টি সীমার প্রান্তে নীল হয়ে দেখা দেয়। অবস্থাভেদে আকাশ বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। আবার রংধনুর মেলায় একইসঙ্গে সাত রঙেও সেজে ওঠে। আকাশের এই বহুরূপী সজ্জার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে সুরা তারিক এর ১১ নং আয়াতে এভাবে এসেছে। ‘কসম ওই আকাশের, যা বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করে।’
সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞান মহাকাশের সাতটি স্তর আবিষ্কার করেছে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে এ রকম; ১. ট্রাপোস্ফিয়ার। ২. স্ট্রাটোস্ফিয়ার। ৩. ওযনোস্ফিয়ার। ৪. মেসোস্ফিয়ার। ৫. থার্মোস্ফিয়ার। ৬. আয়নোস্ফিয়ার। ৭. এক্সোস্ফিযার।
অথচ পবিত্র কোরআনে ১৫০০ বছর আগেই একাধিক আয়াতে এ তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সুরা মুমিনুনের ১৮ নম্বর আয়াতে ‘সাবআ তরাইক’ শব্দে, সুরা মুলকের ৩ নম্বর আয়াতে ‘তিবাকা’ শব্দে এবং সুরা নাবার ১২ নম্বর আয়াতে ‘সিদাদা’ শব্দে মহাকাশের সপ্তস্বরের বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সর্ববৃহৎ মহাকাশ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান নাসা এ তথ্য আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে যে ভূপৃষ্ঠের পরিধি ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে এবং মহাকাশের পরিধি ক্রমে বিস্তৃতি লাভ করছে। চাঞ্চল্যকর এ তথ্যে অনেকেই চোখ কপালে তুলেছিল। কিন্তু আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে মরুভূমির বালুতে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন থেকে এ তথ্য সরবরাহ করেছিলেন মুহাম্মদে আরাবি (সা.)। মহান আল্লাহ বলছেন, আমি নিজ হাতে আসমান সৃষ্টি করেছি এবং আমিই এর বিস্তৃতি ঘটাই। (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৪৭)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি দেখে না আমি ভূপৃষ্ঠের পরিধি ক্রমে সংকুচিত করে আনছি, এর পরও কি তারাই বিজয়ী!’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৪৪)
যেখানে শূন্যের ওপর এক টুকরা টিস্যু পেপারের অস্তিত্বও কল্পনা করা যায় না, সেখানে এত বিশাল মহাকাশ মহাশূন্যের মাঝে কিভাবে ভাসমান থাকতে পারে! জবাব আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেন, ‘তার নিদর্শনাবলি থেকে এটাও একটি যে আসমান-জমিন শুধু তাঁর আদেশের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। (সুরা রোম, আয়াত : ২৫)। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত আসমান আমি খুঁটিবিহিন ভাসমান অবস্থায় সৃষ্টি করেছি, যা তোমরা দেখছো। ’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১০)
পবিত্র কোরআনের বেশ কিছু আয়াত পাশাপাশি রাখলে বিষয়টি সহজে অনুধাবন করা সম্ভব হবে। সুরা আম্বিয়ার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, আমি সুদৃঢ় ছাদরূপে আসমান সৃষ্টি করেছি। আর আকাশের এপার ওপার সংযোগের জন্য রয়েছে দরজা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ আরো বলেন, ‘যারা অহংকারবশত আমার নিদর্শনাবলি অস্বীকার করে তাদের জন্য আকাশের দরজা উন্মোচিত হবে না। আবার এসব দরজায় রয়েছে শক্ত পাহারার ব্যবস্থা। আল্লাহ তাআলা সুরা ফুসসিলাত এর ১২ নং আয়েতে বলেন, মহান আল্লাহ যিনি মাত্র দুই দিনে মহাকাশে সপ্তস্তর নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছেন। প্রতিটি স্তরের কার্যক্রম বিন্যস্ত করেছেন। এবং পৃথিবীর আকাশ অসংখ্য আলোকবাতি দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন এবং সুদৃঢ় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।’
প্রথমবারের মতো আমেরিকান মহাকাশ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান নাসা এ তথ্য সরবরাহ করেছিল যে মহাশূন্য খুব গভীর ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। খুব সকালে সূর্যের রশ্মি ও রাতে তারার আলোতে যে বিচ্ছুরণ সৃষ্টি হয় তা মূলত এই ধোঁয়াশার কারণেই হয়। যেমন—কুয়াশাঘেরা পরিবেশে বাতির আলো ভিন্ন ধরনের রশ্মিবিচ্ছুরণ সৃষ্টি করে। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠ নির্মাণের কাজ সমাধার পর তিনি আকাশ নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করলেন আর তখন তা ছিল ধোঁয়াশাঘেরা। ’ (সুরা ফুসিসলাত, আয়াত : ১১)
ভূপৃষ্ঠের এই ক্ষুদ্র পরিধিতে কয়টা জীব-জানোয়ারেরই বা বসবাস। অথচ এই বিশাল আকাশজুড়ে আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টি জীব রয়েছে, যারা সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহকে সিজদা করে এবং তাঁর গুণগানে মগ্ন। যাদের সংখ্যা শুধু আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি আসমানের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম তা শক্তিশালী নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত। ’ (সুরা জিন, আয়াত : ৮)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন যে একমাত্র তাঁর পবিত্র সত্তা ছাড়া মহাবিশ্বের সব কিছুই ধ্বংসশীল। বিন্দু থেকে শুরু হওয়া এই বৃহৎ বিস্তৃত মহাবিশ্ব আবার শুরুতে ফিরে আসবে। আর সাত আসমান বইপত্র গোটানোর মতো গুটিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা সুরা আম্বিয়ার ১০৪ নং আয়াতে বলেন, ‘সেদিন আমি আকাশমণ্ডলী গুটিয়ে নেব যেমন লিখিত কাগজপত্র গুটিয়ে রাখা হয়।’ অর্থাৎ যখন কিয়ামত হবে, তখন এই আসমান জমিন পাহাড় পর্বত থেকে শুরু করে সকল গ্রহ নক্ষত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন:
কাতারে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রবাসীর মৃত্যু
মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর
বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্থাপনা মসজিদে হারাম
ওমান সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বাবা-ছেলের মৃত্যু
ওমানে সেলফি তুলতে তুলতে মারা গেলেন দুই পর্যটক
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post