কঠোর পরিশ্রম এবং একনিষ্ঠতা বরাবরই সফলতার পথে নিয়ে যায়, তারই এক জলজ্যান্ত প্রমাণ হলেন ওমানের বাংলাদেশি সফল ব্যবসায়ী মো, ইয়াসিন চৌধুরী সিআইপি। সর্বোচ্চ পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে টানা ছয়বার সিআইপি নির্বাচিত হয়ে ওমান প্রবাসী ইয়াসিন চৌধুরী রয়েছেন সফলতার মাপকাঠির সর্বোচ্চ কাতারে।
আড়াই দশক আগে পরবাসে গিয়ে ১০ হাজার টাকা বেতনে কাজ নিয়েছিলেন আসবাবের দোকানে। কিন্তু তার সুদূরপ্রসারী চিন্তা তাকে চাকরিতেই আটকে রাখেনি। কঠোর পরিশ্রম করে ধীরে ধীরে প্রবাসে গড়ে তোলেন আসবাবশিল্পের প্রতিষ্ঠান। তিনটি ব্র্যান্ডসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানজুড়ে রয়েছে তাঁর ১২টি শোরুম। পাশাপাশি হিমায়িত মাছের ব্যবসায়ও সফল হয়েছেন। তিনি এখন বছরে ১২৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেন করেন।
চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরার বাসিন্দা ইয়াসিন মাত্র ২১ বছর বয়সে শ্রমিক ভিসায় পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে। চাকরি করতে করতে সেখানেই নিজস্ব উদ্যোগে কিছু করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সাধ্যমতো টাকা জমাতে থাকেন। দুই বছরের মাথায় নিয়োগদাতার লাইসেন্স নিয়ে প্রথমে আসবাবের সরঞ্জাম বেচাকেনার ব্যবসা শুরু করেন। পরে লাভের টাকায় নিজের পুরনো কর্মস্থলের পাশেই ছোট একটি দোকান ভাড়া নেন তিনি।
দেশে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রদানকারী ইয়াসিন চৌধুরী বলেন, বিক্রি যেমন ভালো হতো তেমনি লাভও হত অনেক। কয়েক বছরের মধ্যেই ওমানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তিন কোটি টাকা জমা দিয়ে বিনিয়োগের লাইসেন্স নেন। নিজের নামে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরুর পর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২০০১ সালে নিজে ৭০ শতাংশ শেয়ার রেখে বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ার ওমানি নিয়োগদাতাকে দিয়ে লিমিটেড কোম্পানি গড়ে তুলেন। আসবাব বেচাকেনার এই কোম্পানির নাম দেন “আকতার আল বেলুসি ট্রেডিং অ্যান্ড কন্ট্রাক্টিং এলএলসি। ওমানে আসবাবের বড় বাজার হিসেবে পরিচিত আল সিব এলাকায় বৃহৎ শোরুম খেলেন তিনি।
ভালো মুনাফা হওয়ায় দুই বছরের মাথায় চীন থেকে আর আমদানি না করে নিজেই আসবাবের কারখানা গড়ে তোলেন। গ্রাহকের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী আসবাব তৈরি করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। ওমানে ইয়াসিন চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে ২০০ জনের। এর মধ্যে ৩০ জন ওমান, ভারত ও পাকিস্তানের। বাকি সবাই বাংলাদেশি। বাংলাদেশিদের ভিসার বিনিময়ে কোনো টাকা নেননি বলে দাবি তাঁর।
আসবাবের ব্যবসায় সফলতা পাওয়ার পর ২০১৮ সালে ‘আল কামেল এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে হিমায়িত মাছের ব্যবসায় যুক্ত হন এই প্রবাসী উদ্যোক্তা। এখন বাংলাদেশ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে মাছ আমদানি করে ওমানের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতেও (ইউএই) হিমায়িত মাছের ব্যবসার জন্য প্রতিষ্ঠান খুলেছেন বলে জানান ইয়াসিন চৌধুরী।
ইয়াসিন চৌধুরী ওমানে দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। তবে বিদেশে ব্যবসা করে সফল হলেও দেশকে কখনোই ভুলে যাননি। প্রথম দিকে জমি কেনার মতো অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করেছেন। এরপর অবশ্য ধীরে ধীরে কৃষি, মৎস্য ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেন। দেশে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইয়াসিন চৌধুরী জানান, নিজে একসময় কর্মী হিসেবে কষ্ট করে দিন কাটিয়েছেন। সে জন্য অন্য প্রবাসীদের দুঃখ-কষ্টও তাঁকে নাড়া দেয়। সে জন্য প্রবাসীদের সহায়তা করতে ২০১৫ সালে গঠন করেছেন চট্টগ্রাম সমিতি, ওমান। সংগঠনটি থেকে এখন পর্যন্ত ১৫০ প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের চিকিৎসাসহ নানা দুর্দশায় আর্থিক সহযোগিতা দেয় এই সংগঠন। তিনি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এ ছাড়া এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তিনি। নিজের সফলতা অর্জন সম্পর্কে ইয়াসিন চৌধুরী বলেন, কঠোর পরিশ্রম করলে ও সততা থাকলে একজন শ্রমিকও রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হতে পারেন।
আরো পড়ুন:
সোনার হরিণের আশায় দুবাই যেয়ে ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন প্রবাসীরা
হাজিদের নিরাপত্তায় মক্কায় সামরিক বাহিনীর মহড়া
ওমানে বৃষ্টির সময় সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান
বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় পতন
ওমানি যুবকের প্রশংসায় নেট দুনিয়া
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post