মধ্যপ্রাচ্যের মরুময় দেশ ওমান। দেশটিতে একই সময় দুই ঋতু। দেশটির মাস্কাট শহরে যখন ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় জনজীবন অতিষ্ঠ, ঠিক তখনই আরেক শহর সালালায় তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বছরের জুন থেকে শুরু হয়। যা স্থানীয় ভাষায় আরবিরা খারিফ বলে থাকে। বাংলায় মূলত বর্ষাকাল। এই সময় গোটা সালালাহ প্রদেশে জমে ওঠে মেলা।
মরুর মধ্যেও যে প্রকৃতি লুকিয়ে থাকে এখানে না গেলে কেউ বুঝতে পারবেনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষাধিক পর্যটক আসেন এই খারিফ দেখতে। দিন রাত ২৪ ঘন্টা হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি এবং ঠান্ডা আবহাওয়া দেখে মুগ্ধ হন আগত পর্যটকরা। মরুভূমির হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে সালালাহ শহরটিতে প্রবেশ করতেই স্বাগতম জানাবে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। কুয়াশাচ্ছন্ন সড়ক। খারিফে সড়ক এত বেশিই আচ্ছন্ন দিনের বেলায় লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালানো খুব দুরূহ। পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে সমতলে পৌঁছে সবুজ পরিপাটি শহরটি দেখে মনে হবে এ যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।
শহরে পর্যটকদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত হোটেল ব্যবস্থা। যদি সালালার রূপ রহস্য খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে চান, তবে হাতে কয়েকটা দিন নিয়ে যেতে হবে। শুরুতে শহর থেকে ৩৭ কি.মি. দূরে পাহাড়ি পথ বেয়ে গাড়িযোগে যেতে পারেন নবী আইয়ুব (আ:) এর কবর জিয়ারতে।
আইয়ুব নবী সারা শরীর পঁচে যাওয়ার মতো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে কোথায় বসবাস করেছিলেন। পাহাড়ের পাদদেশে যেখানে গোসল করতেন, সেটিও দেখতে পাবেন সেখানে। একসঙ্গে কবরে জিয়ারত সঙ্গে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করা যাবে। সালালাহ সিটির ভেতর ইমরান নবী (আ:) এর ২ শত ফুট লম্বা কবরটি দেখে অনুমান হয়ে যাবে পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্নে মানুষ কত লম্বা ছিল।
এবার শহর ছেড়ে বের হয়ে ৬০ কি.মি. পথ অতিক্রম করে ছুঁটে যান ওয়াদি দারবাত। যেখানে সবুজ পাহাড়ের দু’পাশ মনে করিয়ে দেবে রাঙামাটি কিংবা বান্দরবানের কথা। সবুজ পাহাড়ের ভেতরে গিয়ে দেখা মেলে অপরূপ জলরাশি। পাহাড় থেকে নিচে পড়ার দৃশ্যগুলো আপনার দৃষ্টি আগলে রাখবে।
পর্যটকরা ভিড় করেছে সেখানে। তার আশপাশের দৃশ্যগুলো এতই পরিপাটি মনে হবে কোন ইউরোপ মহাদেশের দেশে রয়েছেন আপনি। ওয়াদি দারবাত দেখা শেষে তার ২৫ কি. মি. পরে মিরবাত-তাকাহ রোডে রয়েছে অটোমেটিক গাড়ি চলাচলের সড়ক। যাকে ম্যাগনেট রোড বলা হয়। এই পাহাড়ি সড়কে গাড়ি বন্ধ করে রাখলেও উপরগামী সড়কে গিয়ার ছাড়া চলে গাড়ি!
সালালাহ ভ্রমণে গিয়ে মুগশাল বিচ না দেখলে সালালাহ ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যাবে। এটিও শহর থেকে ৪৭ কি.মি. দূরে। সাগরের ঢেউ এর গতির পরিমাণ যে কি রকম হতে পারে তা দেখা যাবে এখানে। পাহাড় যে কতো রঙ এর, কতো ঢং এর তারও দেখা মিলবে এ বিচে আসলে।
শহর থেকে সামান্য বের হলে সাগর পাড়ে রয়েছে ইউনুস নবীকে মাছে যেখানে পেট থেকে বের করে রেখেছিলেন সেই ঐতিহাসিক স্থান। এছাড়া রয়েছে একাধিক সাহাবীদের কবর, ইসলামের বহু নিদর্শনের স্থান এই সালালাহ অঞ্চলে। হাতে যদি সময় থাকে, ওই সড়ক ধরে যেতে পারেন ওমান- ইয়ামেন বর্ডার ডালকুত। ডালকুতে দেখার মতো তেমন কিছু নেই, তবে এখানের সৌন্দর্য যাত্রাপথের আকাঁবাকা ১৪৫ কি.মি পথ। যেতে যেতে খুব অবাক হবেন, পাহাড়ের এতই বেশি ওপরে সড়ক যা আকাশের মেঘও হার মানবে।
কোথাও কোথাও মেঘ নিচে আর আপনি তার উপরে! সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে এক হাজার ফুট ওপরে পাহাড়ে পাহাড়ে সমতল আবার সেখানে লোকারণ্য দেখে সত্যিই আপনি বিস্মিত হয়ে যাবেন। আরবের পথে প্রান্তরে যে উটের সারি সারি লাইন ছবি কিংবা ভিডিওতে আমরা দেখতে পেতাম তার বাস্তব দৃশ্য চোখে পড়বে অহরহ।
এই সালালাতেই রয়েছে ঐতিহাসিক সেই লোবান গাছ, যা বিশ্বের দামী সুগন্ধির মধ্যে একটি। এই লোবানকে স্বর্ণের চেয়েও দামী পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। একইসাথে কথিত সাদ্দাতের বেহেস্ত, নবী সুলাইমান আঃ এর স্ত্রী রাণী বিলকিশ এর সেই ৬০ হাজার বছরের পুরনো সামহারাম শহর ও দেখতে পাবেন।
আরো পড়ুন:
সোনার হরিণের আশায় দুবাই যেয়ে ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন প্রবাসীরা
হাজিদের নিরাপত্তায় মক্কায় সামরিক বাহিনীর মহড়া
ওমানে বৃষ্টির সময় সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান
বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় পতন
ওমানি যুবকের প্রশংসায় নেট দুনিয়া
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post