সোনার হরিণের আশায় দুবাই যেয়ে এখন ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি। খোজনিয়ে জানাগেছে, সারাদিন কাজের জন্য ঘুরে ক্লান্ত হয়ে রাতে পার্কে এসে ঘুমান অনেকেই। সারাদিন কাজ না পেয়ে এভাবেই রাত যত বাড়ে তত প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ে পাবলিক পার্কগুলোতে।
পার্কে রাত কাটানো অধিকাংশ প্রবাসী ভিজিট ভিসা নিয়ে, আবার কেউ বা ফ্রি ভিসা নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় গিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত। দালালদের ফাঁদে পা দিয়ে এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি তাঁরা। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এমন বেশ কয়েকজন প্রবাসী বলেন, ভ্রমণ ভিসা নিয়ে দুবাই গেছেন ছয় মাস হলো। এখনও কাজের কোনো বন্দোবস্ত হয়নি।
দেশ থেকে টাকা এনে দু’বার ভিসাও নবায়ন করেছেন। কিন্তু কাজ না থাকায় বাসা ভাড়া নিতে পারছেন না, নেই প্রতিদিনের তিনবেলা খাবারের টাকাও। নিরুপায় হয়ে সারাদিন কাজের সন্ধানে দিজ্ঞ্বিদিক ঘুরে রাতে দুবাইয়ের পাবলিক পার্কের সবুজ ঘাসে ক্লান্ত শরীরকে এলিয়ে দেন। খোলা আকাশের নিচে শুয়ে ভাবেন- কবে জুটবে একটি কাজ, কবে হবে অপেক্ষার অবসান।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিজ দেশের মানুষের মাধ্যমে বেশিই প্রতারিত হচ্ছেন। একবার প্রতারিত হয়ে দেশ থেকে দুবাই গেছেন। সেখানে যেয়ে দ্বিতীয় দফায় প্রতারিত হচ্ছেন। অনেকে কাজ দেওয়ার কথা বলে প্রথমে দুই হাজার দিরহাম দাবি করে। তাদের একজনের হাতে টাকা তুলে দিলে আর কোনো যোগাযোগ করে না। মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, দালালের মিষ্টি কথায় পড়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা হাতে তুলে দিয়ে দুবাই যান তিনি। সোনার হরিণ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণও তুলেছেন তিনি। দালাল বলেছিল, দুবাই পৌঁছলে বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে করে বাসায় নিয়ে যাবে। ভালো কাজ, বিনামূল্যে খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এই প্রলোভনে পড়ে তাঁর সঙ্গী হন আরও ১০ তরুণ। কিন্তু দুবাই পৌঁছেই বুঝতে পারেন বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাঁরা। এরপর একটি আবদ্ধ ঘরে কর্মহীন কাটতে থাকে তাঁদের মাসের পর মাস। এসব বিষয়ে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটে অভিযোগও দায়ের করেন তাঁরা।
জানা গেছে, গত দুই-তিন বছরে অন্তত ২ লাখ বাংলাদেশি ভ্রমণ ভিসা নিয়ে আমিরাত গেছেন কাজের সন্ধানে। ভিসার মেয়াদ থাকতে কাজের বন্দোবস্ত হয়ে গেলে সুযোগ আছে ভিসার ধরন পরিবর্তন করার। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে গিয়ে প্রতিদিন দালালদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি। আবার ফ্রি ভিসার নামেও একই কায়দায় কর্মসংস্থান ভিসা বিক্রি করছে দালাল চক্র। এসব ভিসা নিয়ে দেশ থেকে আসার আগে একবার প্রতারণার শিকার হওয়া প্রবাসীরা কাজ খুঁজতে গিয়ে দ্বিতীয়বার ঠকছেন।
অসাধু দালাল চক্রের মিথ্যা প্রলোভনে না পড়তে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন দুবাই ও উত্তর আমিরাত কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন। তিনি বলেন, বিদেশগামীদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। দালালদের মিথ্যা প্রলোভনে পা না দিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিএমইটির মাধ্যমে ভিসা যাচাই করে তবেই বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেন সরকারের এই কর্মকর্তা।
আরো পড়ুন:
মালয়েশিয়ায় রামদার কোপে বাংলাদেশি নিহত
সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমলো ৩৫ হাজার কোটি টাকা
মাসের পর মাস গেলেও কর্মী যাচ্ছেনা মালয়েশিয়ায়
১১ মাস ধরে আশংকাজনক হারে কমছে রেমিট্যান্স
ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ বন্দর ওমানের সালালাহ পোর্ট
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post