মহামারী করোনার এই সংকটময় কালেও প্রথমবারের মত বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়ালো ৩৪ বিলিয়ন ডলার। গতকাল বুধবার (৩ জুন) দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় তিন হাজার ৪২৩ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের জরুরি সহায়তা রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এছাড়া এডিবি ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া ঋণ ও সহায়তা এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে সময় সংবাদকে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান। তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থও জমা আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে রপ্তানি কমে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ার আরেকটি কারণ।
এদিকে চলতি মাসের প্রথম দুই দিনে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। সামনের দিনগুলোতে রেমিটেন্স প্রবাহ এমন থাকলে করোনা মহামারিতেও এ মাসে এক বিলিয়নের বেশি প্রবাসীর আয় আসবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। বর্তমানে মজুদ বিদেশি মুদ্রায় দেশের ৮ মাসের বেশি রপ্তানি আয় মেটানো যাবে।
চলতি অর্থবছরে ২ জুন পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ বেশি। ঈদ উপলক্ষে গত মে মাসে প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রবাহ আগের মাসের তুলনায় বেশখানিকটা বেড়ে দেড় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে রেমিটেন্সে নগদ ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার পরই বাড়তে থাকে বৈধ পথে প্রবাসী আয়।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে রেকর্ড গড়লেও বর্তমান এই করোনাময় মুহূর্তে নানা সমস্যায় রয়েছেন প্রবাসীরা। এ ব্যাপারে ওমানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইয়াসিন চৌধুরী (সিআইপি) বলেন, “প্রবাসীদের অবদানে চলতি অর্থবছরে ২ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩৪.২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবাসীরা সবার আগে। প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৬.৫০ বিলিয়ন ডলার। যা রিজার্ভের প্রায় ৫০ ভাগ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, প্রবাসীদের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না।
বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে লক্ষ লক্ষ প্রবাসী না খেয়ে অসুস্থ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা পারছেন না দেশে প্রিয়জনের কাছে যেতে, আবার অনেকে বাংলাদেশে আটকা পড়ে আছেন বিদেশে ব্যবসা বাণিজ্য এবং পরিবার-পরিজন রেখে। সরকারের পক্ষ থেকে দূতাবাসের মাধ্যমে অসহায় কর্মহীন প্রবাসীদের জন্য যে সাহায্য দেয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
আরও পড়ুনঃ করোনা সঙ্কটেও ঈদের মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স
জরুরী প্রয়োজনে যে সকল প্রবাসী বৈধ-অবৈধ বাংলাদেশ যেতে চায়, আর বাংলাদেশে যারা আটকা পড়ে আছে তাদের বিদেশে যাওয়ার জন্য এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত অসহায় কর্মহীন প্রবাসীদের পরিবারকে তালিকাভুক্ত করে সরকারি সাহায্যের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। আশা করি প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাদের সঠিক মূল্যায়ন হবে। অন্যথায় প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post