সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (১৩ মে) আমিরাতের প্রতিটি মসজিদে বাদ মাগরিব প্রেসিডেন্টের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার দেশটির রাজধানী আবুধাবির আল বাতিন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে আবুধাবির শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান আবুধাবির প্রথম মসজিদে জায়েদ খলিফা বিন জায়েদের জানাজায় অংশ নেন। এ সময় তারা প্রয়াত প্রেসিডেন্টের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
৭৩ বছর বয়সী শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান আবুধাবিরও শাসক ছিলেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। ২০০৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি আবুধাবির শাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। দেশটির প্রেসিডেনশিয়াল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয় শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী, এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বর্তমানে দুবাইয়ের শাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাতটি আমিরাত রয়েছে। এই আমিরাতগুলোর শাসকদের নিয়ে গঠিত ফেডারেল কাউন্সিল ৩০ দিনের মধ্যে বসে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে।
খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের বাবা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম প্রেসিডেন্ট। ১৯৭১ সালে আমিরাতগুলো নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠিত হয়। তখন থেকেই দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসা জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ২০০৪ সালের ২ নভেম্বর মারা যান। পরদিন দেশটির সবচেয়ে সমৃদ্ধ আমিরাত আবুধাবির শাসক ও দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আসেন খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। তিনি ছিলেন আবুধাবির ষোড়শ শাসক।
খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের জন্ম ১৯৪৮ সালে। ২০১৪ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন তিনি। এর পর থেকে তেমন জনসমক্ষে আসতেন না। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের অসুস্থতার পর থেকে কার্যত তাঁর সৎভাই যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল–নাহিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের এই মিত্রদেশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এখন তিনিই আবুধাবির শাসক হতে পারেন।
দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খলিজ টাইমস জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান কেন্দ্রীয় ও আবুধাবি সরকার উভয়েরই একটি বড় পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দেন। তাঁর আমলে দেশটিতে উন্নয়ন নতুন গতি পায়।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান প্রথম যে কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন, তার কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল দেশের নাগরিকদের সমৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়ন। ওই পরিকল্পনায় দেশের ভারসাম্যপূর্ণ ও টেকসই উন্নয়ন অর্জনে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
নাহিয়ানের মৃত্যুতে শনিবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ। শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শনিবার (১৪ মে) দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশের বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে বাংলাদেশের ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের রুহের মাগফেরাতের জন্য শনিবার বাংলাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তার আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসাথে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানেও ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোসনা করেছেন দেশটির সুলতান হাইথাম বিন তারেক।
আরো পড়ুন:
হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু ১৬ মে, চলবে তিনদিন
পাসপোর্ট অফিসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য, অনুসন্ধানে দুদক
প্রবাসী বন্ডে কমছে মুনাফার হার
ডা. মুরাদের মাথার ওপর ভেঙে পড়ল সিলিং ফ্যান
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post