অপহরণের পর মিজদাতেই প্রায় ১৫ দিন অপহরণকারীদের জিম্মায় ছিলেন অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশি ও সুদানি নাগরিকরা। অপহরণকারীদের সাথে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষি চলছিল। তবে তাদের কাঙ্ক্ষিত দাম দিতে পারছিলো না কেউই। মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আাটককৃতদের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে অপহরণকারীরা। এক পর্যায় বাংলাদেশিদের সাথে থাকা সুদানি নাগরিকরা অপহরণকারী চক্রের এক সদস্যকে মেরে ফেলেন। এরপর ক্ষুদ্ধ হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালালে ৩৮ জন বাংলাদেশির সবাই গুলিবিদ্ধ হয়। মারা যায় ২৬ জন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় কয়েকজন ভিতরেই পড়ে ছিল, দুই-একজন আহত অবস্থায় বের হয়ে আসে। স্থানীয়রা তাদের দেখে সেনাবাহিনীকে খবর দেয় এবং সেনাবাহিনী তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।
লিবিয়ার সংবাদ মাধ্যম আল-ওয়াসাত এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন মানব পাচারকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন মোহাম্মদ আব্দুল রহমান। অজানা কারণে শুরু হওয়া এক ‘বিদ্রোহে’ তিনি মারা যান। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা ঐ ভবনটি ঘেরাও করে এবং মরদেহ ফিরে পাওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করে। একপর্যায় ঐ ভবনে উপস্থিত ১০০ জন অভিবাসী আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু ৪০ জন ভবন ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ঐ ভবনে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও রকেট দিয়ে হামলা করার পর ভবনের ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা নিহত হন’ তবে লিবিয়ার সংবাদ মাধ্যম আল-ওয়াসাতের প্রতিবেদনটিতে দেয়া তথ্যগুলো অন্য কোন সূত্র থেকে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির দক্ষিণে মেজদা শহরে মানবপাচারকারী চক্রের এলোপাতাড়ি গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১১ জন গুরুতর আহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন একজন। তিনিই দূতাবাসকে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন। তার নাম-পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে নিরাপত্তার স্বার্থে। তবে তিনি সম্পূর্ণ অক্ষত ও বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ত্রিপলীর বাংলাদেশ দূতাবাস।
বেঁচে যাওয়া ওই বাংলাদেশি নাগরিকের বয়ান মতে, নিহত ২৬ জনসহ মোট ৩৮ জন বাংলাদেশি ও কিছু সুদানি নাগরিক প্রায় ১৫ দিন ধরে ঐ অপহরণকারী চক্রের হাতে আটক ছিলেন। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলী থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদায় আটক করে রাখা হয়েছিল তাদের। সেখানেই ২৮ মে সকালে বন্দীদের ওপর গুলি চালায় অপহরণকারীরা।
বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি জানান, মূলত ইতালিতে অভিবাসনের উদ্দেশ্যে ঐ ৩৮ জন বাংলাদেশি লিবিয়ায় গিয়েছিলেন। করোনাভাইরাসের শুরুর আগে তারা ভারত ও দুবাই হয়ে বেনগাজি বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর গত প্রায় দুই মাস তাদেরকে লিবিয়ার ভেতরে গোপনে রাখা হয়েছিল। পাচারকারীদের পরিকল্পনা ছিল, উপকূলীয় অঞ্চল যুওয়ারা হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসীদের নিয়ে ইতালির দিকে যাত্রা করার।
কিন্তু প্রচলিত ও ব্যবহৃত পথে না গিয়ে মরুভূমির মধ্যে দিয়ে বেশ বিপদসংকুল একটি পথে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। যুদ্ধকবলিত লিবিয়ায় একাধিক সরকার থাকায় ত্রিপলী হয়ে যুওয়ারা যাওয়ার প্রচলিত পথে নানা রকম তল্লাশি হয়। সেই পথ এড়িয়ে কম ব্যবহৃত মরুভূমির মধ্যকার রাস্তা দিয়ে অভিবাসীদের নিয়ে যুওয়ারা যাচ্ছিলেন পাচারকারীরা। এ পথেই সন্ত্রাসীদের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে থাকায় অচেনা লোক ঢুকলেই তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেনগাজি থেকে মরুভূমির রাস্তায় যুওয়ারা যাওয়ার পথে তারা অপহরণকারীদের কবলে পড়েন।
আরও পড়ুনঃ ওমানে রয়্যাল কোর্টের নতুন আইন জারি
অপহরণকারীরা মোট ৩৮ জনের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জড়ো করে। তাদের রাজধানী ত্রিপলীতে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মিজদাহ শহরে নেয়ার পর তাদের ওপর শুরু হয় বর্বর নির্যাতন। উদ্দেশ্য দ্রুত মুক্তিপণ আদায়। অত্যাচার-নির্যাতনের চরম পর্যায়ে সুযোগ বুঝে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ভিকটিমরা। তারা মূল হোতা লিবিয়ান ব্যক্তির ওপর চড়াও হলে তার মৃত্যু ঘটে। কিন্তু ঘটনাটি তখনই তাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যায় এবং বড় বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে যায় ওই নিহত পাচারকারীর স্বজনদের কাছে। তারাসহ অন্য দুষ্কৃতিকারীরা আকস্মিকভাবে জিম্মিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করলে অন্তত ২৬ জন বাংলাদেশি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
সূত্র: আলজাজিরা
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post