পবিত্র রমজানের রোজা মানুষের জন্য ফরজ ইবাদাত। রমজানে দিনের বেলা পানাহার করা যায় না, স্ত্রী সহবাসও নিষেধ। কিন্তু অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকেন যে, রমজানে রাতের বেলা স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করা জায়েজ আছে কি? কেউ রমজানে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলে কি রোজার অসুবিধা হবে?
রমজান মাসে সহবাসের বিধি-নিষেধ :
এই প্রশ্নের উত্তর হলো- আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সঙ্গে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)। আর পবিত্র কোরানের এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়,রোজাদারের জন্য দিনের বেলা সহবাস হালাল করা হয়নি।
আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে রমজান মাসে ইফতারির পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস হালাল করেছেন। তবে রমজানে সহবাসের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। কেননা, রমজান মাসে দিনের বেলা রোজা অবস্থায় যদি কেউ সহবাসে লিপ্ত হয়— তাহলে তার ওপর নিম্নে উল্লিখিত বিষয়গুলো বর্তাবে। সেগুলো হলো- এক. সে গুনাহগার হবে। দুই. তার সেদিনের রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। তিন. সেদিনের বাকি অংশ পানাহার ও যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। চার. সেদিনের রোজার কাজা করা ওয়াজিব হবে।
তবে কোনো স্বামী যদি জোর করে দিনের বেলায় স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন, সেক্ষেত্রে স্বামীর রোজা ভেঙ্গে গেলেও স্ত্রীর ভাঙবে না। ইবনে আব্বাস বর্ণিত এক হাদিসে উল্লেখ করা হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার উম্মতের ওপর থেকে ত্রুটিবিচ্যুতি, ভুলে যাওয়া ও জোর করিয়ে করানো কাজকে মার্জনা করেছেন।
শরিয়াতে যৌন সম্পর্ক বলতে পুরুষাঙ্গের সঙ্গে স্ত্রী-অঙ্গের মিলন বোঝায়। এখানে বীর্যপাত শর্ত নয়। এই দুই অঙ্গ সংস্পর্শে আসলেই রোজা ভেঙ্গে যাবে। এমনকি বীর্যপাত না ঘটলেও। তবে যৌন মিলনের দ্বারা কেউ রোজা ভাঙলে সেটি পরবর্তীতে কাযা করতে হবে এবং কাফফারাও দিতে হবে।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে শারীরিক স্পর্শ বা শুধু চুমুর কারণে রোজা ভাঙবে না। তবে এর ফলে যদি বীর্যপাত ঘটে, সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তাই রোজার সময় এগুলো পরিহার করাই উত্তম।
ফরজ গোসলের আগে সাহরি খাওয়া যাবে কি?
কোনো ব্যাক্তির ওপর যদি গোসল ফরজ হয়, আর সে গোসল করা ছাড়া সাহরি খায়; তাহলে তার রোজার কোনো সমস্যা হবে না। আল্লাহর রাসুল (সা.) জুনুবি (গোসল ফরজ) অবস্থায় সাহরি গ্রহণ করেছেন বলে একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়া এটাও প্রমাণিত যে, সাহরি খাওয়ার আগে তিনি অজু করে নিতেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে— গোসল ফরজ অবস্থায় সেহরি খেলে ফজর নামাজের আগে অবশ্যই গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে নিতে হবে।
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রয়েছে যে, ‘রমজান মাসে স্বপ্নদোষ ছাড়াই অপবিত্র অবস্থায় (অর্থাৎ স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে নাপাক অবস্থায়) রাসুল (সা.)-এর ফজর হয়ে যেত। অতঃপর তিনি গোসল করে রোজা রাখতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮২৯; মুসলিম, হাদিস : ১১০৯)
অতএব, কোনো ব্যক্তি এমন করে থাকলে— তার রোজা হয়ে যাবে, তবে ফজরের নামাজের আগে অবশ্যই তাকে গোসল করে নিতে হবে। নতুবা ফজরের নামাজ কাজা হবে, যেটি কোনোভাবেই জায়েজ নেই।
আর রোজা রাখা অবস্থায় ফরজ গোসল করার নিয়ম অন্য সময়ের নিয়মের মতোই। তবে রোজা অবস্থায় গোসল করার সময় গড়গড় করে কুলি করা যাবে না। বরং এমনিতেই তিন বার কুলি করবে। এছাড়া নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছাবে না। কারণ, গড়গড় করে কুলি করলে ও নাকের নরম জায়গায় পানি দিলে— কণ্ঠনালিতে পানি চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, আর এতে রোজা ভেঙে যাবে। তাই রোজার মাসে অজু-গোসলের সময় এই দুইটি কাজ করবে না।
অতএব আমরা শরিয়াতের বিধি বিধান মেনে চলি। রোজা রেখে দিনের বেলায় সহবাস থেকে বিরত থাকি। শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধির মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা বজায় রাখি।
আরো পড়ুন:
ওমানে বাড়লো প্রবাসীদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ
ওমানে মর্মান্তিক পাহাড়ধসে আরো এক প্রবাসীর মরদেহ উদ্ধার
তুরস্কের হায়া সোফিয়ায় ৮৮ বছরে প্রথম তারাবি হতে চলেছে
হিজাব ইস্যুতে মেয়েদের টার্গেট করা হচ্ছে: মিস ইউনিভার্স
প্রবাসীদের মাঝে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া শুরু
রমজানে ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাসে নতুন অফিস সূচি
ওমানে পাথর ধ্বসের পর এবার মাটিধসে এক প্রবাসী নিহত
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post