যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত ধরে অতি-রক্ষণশীলতার খোলস ভেঙে উদারপন্থী সমাজ-সংস্কৃতির পথে হাঁটা সৌদি আরবের ফিল্ম কমিশন দেশটিকে ‘চলচ্চিত্র নির্মাণের বৈশ্বিক গন্তব্য’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সৌদি ফিল্ম কমিশন দেশটিতে চলচ্চিত্র নির্মাণে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সব প্রযোজনা সংস্থাকে সহায়তায় নতুন এক উদ্যোগ ঘোষণা করেছে।
মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেদ্দায় প্রথম রেড সি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চলাকালীন ফিল্ম কমিশন নতুন উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছে। এটি একটি প্রণোদনামূলক কর্মসূচি যার লক্ষ্য, সৌদি আরবে চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রযোজনা সংস্থাকে সহায়তা করা, উৎসাহিত করা এবং আকৃষ্ট করা।
সৌদি আরবকে চলচ্চিত্র শিল্পের বৈশ্বিক গন্তব্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কৌশলগত পদক্ষেপের অংশ হিসাবে ওই উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির ফিল্ম কমিশন। এর মাধ্যমে দেশটির তরুণ-তরুণীদের চলচ্চিত্র শিল্পে আগ্রহী করে তুলতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের স্থায়ী চাকরির সুযোগ তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সৌদি আরবকে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নির্মাণের কেন্দ্র বানানোর লক্ষ্যে নেওয়া প্রণোদনা কর্মসূচি স্থানীয় চলচ্চিত্র ক্রু, এই প্রকল্পে সরাসরি জড়িত ব্যক্তি এবং দেশের প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র নির্মাণ স্থাপনায় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।
লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর জেদ্দায় প্রথমবারের মতো ‘রেড সি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ শুরু হয়েছে। গত ৬ ডিসেম্বর জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন হওয়া আলোচিত এই চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামছে আগামী বুধবার। বিশ্বের অন্তত ৬৭টি দেশের নারী নির্মাতাদের তৈরি ১৩৮টি পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে এই উৎসবে।
সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এরপর দেশটির নারীদের ওপর যুগ যুগ ধরে চলে আসা গাড়ি চালানোর, হজ পালনের ও ঘুরতে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বিভিন্ন আইনে সংশোধনী আনা হয়।
২০১৮ সালের এপ্রিলে দেশটিতে সিনেমা হল চালু ও নারী-পুরুষের একসাথে সিনেমা দেখার অনুমতি দেওয়া হয়। একই সাথে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটিতে সাড়ে ৩০০ সিনেমা হল এবং আড়াই হাজার মুভি স্ক্রিন তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে সৌদি প্রশাসন।
এছাড়া দেশটিতে বসবাসরত অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় স্থাপনেরও অনুমতি মিলেছে; যা অতীতে কল্পনা করা অসম্ভব ছিল। আগে সৌদি আরবে ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালন নিষিদ্ধ ছিল। মদ্যপান ও বিক্রির বিষয়ে দেশটিতে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা ধীরে ধীরে তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি। পাঠ্যপুস্তকেও নানা ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post