করোনা মহামারির সময়ে দেশের যখন সকল সেক্টরে অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা যাচ্ছিলো, তখনোও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন প্রবাসীরা, দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে থাকা এই প্রবাসীরা সরকারের কোনো সুযোগ সুবিধা ভোগ করেননা। বছরের পর বছর শুধুমাত্র দিয়েই যান এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। অথচ ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে একটু ভালোমতো তাদের গন্তব্যে যাবেন, সেই সুবিধাটুকুও পাচ্ছেননা প্রবাসীরা।
মঙ্গলবার (১৪-ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা বিমানবন্দরে যেয়ে দেখা যায় বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীরা তাদের মাথায় লাগেজ এবং দুইহাতে ব্যাগ নিয়ে অসহনীয় কষ্ট করে এয়ারপোর্ট থেকে বের হচ্ছেন।
বিমানবন্দরের কর্মীরা ট্রলি নিয়ে গাড়ি পর্যন্তও যাওয়ার সুযোগ টুকু দিচ্ছেনা। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে প্রত্যেক যাত্রীর বিমান ভাড়া থেকে এমবারগেশন ফি, ট্রাভেল ট্যাক্স, ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স, এক্সাইজ ডিউটি ট্যাক্স ছাড়াও বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য ৯৩৩ টাকা করে নেওয়া হলেও তা দিয়ে কী করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
যাত্রীরা ভাড়ার সঙ্গে এসব ফি দিলেও পাচ্ছেননা কাঙ্ক্ষিত সেবা। উল্টো বিমানবন্দরে ট্রলি না পেয়ে লাগেজ মাথায় নিতে হচ্ছে তাদের। দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরের এমন বেহাল দশায় বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিদেশি যাত্রীরাও ক্ষুব্ধ। কয়েক মাস ধরে এই সমস্যা প্রকট রূপ নিলেও এখনও কোনও সমাধান বের করতে পারেনি বেবিচক।
১৪ ডিসেম্বর সকালে বিমানবন্দরের এমন চিত্র ধারণ করতে গেলে উল্টো প্রবাস টাইমের সাংবাদিকের উপর ক্ষিপ্ত হন এক নিরাপত্তা কর্মী। ভিডিও না করতে দিয়ে উল্টো অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন আর্মড পুলিশের উক্ত নিরাপত্তা কর্মী। সরেজমিনে দেখা গেছে বর্তমানে রাতের ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সকালে প্রচুর যাত্রীর চাপ পড়ে বিমানবন্দরে।
বিদেশ ফেরত যাত্রীরা ট্রলির জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউকেউ অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও ট্রলি না পেয়ে লাগেজ ও অন্যান্য মালামাল টেনে-হেঁচড়ে বের করছেন। আবার যাদের একাধিক লাগেজ আছে তারা একটিকে মাথায় বয়ে নিয়ে কিছুদূরে রেখে এসে অন্যটি তুলে নিচ্ছেন।
আবার যারা ট্রলি পাচ্ছেন, তাদেরকে বহুতল কার পার্কিং পর্যন্তও নিতে দিচ্ছেনা ট্রলি। এ যেন হয়রানী আর ভোগান্তির এক কারখানা। বিশ্বের প্রায় সব বিমানবন্দরে যাত্রীরা টার্মিনাল থেকে পার্কিং জোন পর্যন্ত ট্রলি ব্যবহারের সুবিধা পান।
কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্যানোপির (যাত্রী ছাউনি) বাইরে ট্রলি নেওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে যেসব যাত্রীর গাড়ি পার্কিং জোনে থাকে তাদের ল্যাগেজ নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে মাথায় লাগেজ নিয়ে বের হওয়ার চিত্র প্রতিদিনের।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা। এছাড়া একাধিক লাগেজ বহনকারীরা পড়েন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে। কারণ প্রায়ই লাগেজ চুরি, ভুলে ফেলে যাওয়া কিংবা বদলে যাওয়ার ঘটনা হচ্ছে বিমানবন্দরে। একইভাবে যেসব যাত্রী বিদেশ যাচ্ছেন তারাও ট্রলি সংকটে ভোগান্তিতে পড়ছেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে দিনে গড়ে ১০০টি ফ্লাইট চলাচল করে। এগুলোতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে প্রায় ২ হাজার ২০০টি ট্রলি আছে। এর মধ্যে ১ হাজারের বেশি ট্রলি ব্যবহারের অনুপযোগী। একইদিনে কাছাকাছি সময়ে পাঁচটি আগমনী ও পাঁচটি বহির্গমন ফ্লাইট থাকলে কমপক্ষে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার ট্রলির প্রয়োজন পড়ে।
এসব ট্রলি ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত জনবলও নেই বিমানবন্দরে। যে কয়েকজন ট্রলিম্যান কাজ করেন তারা প্রটোকলসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। ট্রলিম্যানদের জন্য নির্ধারিত পোশাক থাকলেও তারা তা ব্যবহার করেন না। এ কারণে যাত্রীরা ট্রলি খোঁজায় সহায়তা পান না। যাত্রীদের ব্যবহারের পর সীমিতসংখ্যক ট্রলি এখানে-সেখানে পড়ে থাকলেও সেগুলো সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে উদাসীন ট্রলিম্যানরা।
যাত্রীদের প্রশ্ন, একটি ট্রলির দাম কত এবং উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ফি নিলেও তার বিপরীতে যাত্রীদের কী সেবা দেয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ? অনলাইনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আকৃতি ও মানের ভিন্নতায় একটি ট্রলির দাম ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।
একটি ফ্লাইটে গড়ে ২০০ জন যাত্রী থাকলে বিমানবন্দর উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ফি আদায় হচ্ছে জনপ্রতি ৯৩৩ টাকা করে মোট ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬০০ টাকা। মোটামুটি মানের একটি ট্রলি ১৫ হাজার টাকা ধরলে একটি ফ্লাইটের যাত্রীদের ফি থেকেই ১২টি ট্রলি কেনা সম্ভব। সারাদিনে ১০০টি ফ্লাইট চলাচল করলে সেগুলোর যাত্রীদের ফি দিয়ে দিনে কমপক্ষে ১ হাজার ২০০টি ট্রলি কিনতে পারেন বেবিচক।
ট্রলি না পেয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীদের অনেকেই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। প্রবাসীরা বলেন, বিদেশে সুপার শপের পার্কিংয়ে যে পরিমাণ ট্রলি থাকে তার অর্ধেকও এই বিমানবন্দরে নাই। হাজার হাজার মানুষ লাগেজ মাথায় নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হচ্ছে, লজ্জা থাকলে মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।’
এদিকে, বিমানবন্দরে ট্রলি সংকটের অভিযোগের মুখে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, যাত্রীদের বিদেশযাত্রা ও আগমনকে আরও আরামদায়ক করতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন করে আড়াই হাজার নতুন ট্রলি যুক্ত হচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post