দেশের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সমালোচিত এবং সদ্য সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে দেশের বাইরে যেতে বিমানের একটি টিকিটও সংগ্রহ করেছেন তিনি।
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই সম্ভাব্য কোন দেশে যাওয়া যায় তার খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। পরে চূড়ান্তভাবে কানাডা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ডা. মুরাদ। প্রথমে সপরিবারে যাওয়ার চিন্তা থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের ভিসা না থাকায় নিজেই দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন তিনি।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, পদত্যাগের আগ পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী থাকাবস্থায় মুরাদের যে লাল পাসপোর্ট (বিশেষ পাসপোর্ট) ছিল, সেটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার কাছে থাকলেও পদত্যাগের কিছুক্ষণ আগে ব্যক্তিগত একজন সহকারীকে দিয়ে তা নিজের কাছে নেন তিনি।
যদিও লাল পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশে যেতে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। লাল পাসপোর্টধারী ব্যক্তি সরকারি আদেশ (জিও) ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে সদ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা ডা. মুরাদ জিও না থাকায় বিদেশগমনে জটিলতায় পড়তে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও তিনি এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন।
এ অবস্থায় তার বিদেশগমন অনিশ্চিত হতে পারে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। এদিকে মঙ্গলবার রাতেই রাজধানীর শাহবাগ থানায় ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। নারীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও।
এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্মসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুরাদ হাসানের অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের ৩৮৭টি লিংক চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গত সোমবার একজন চিত্রনায়িকার সঙ্গে তার অশ্লীল কথোপকথনের অডিও ফাঁস হওয়ায় পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান ডা. মুরাদ। ওই দিনই তিনি ঢাকা থেকে গোপনে চলে যান চট্টগ্রাম।
উঠেন র্যাডিসন ব্লু হোটেলে। সর্বশেষ ওই হোটেল ছেড়ে অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান। সোমবার রাতেই তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন আত্মগোপনে থেকেই ই-মেইলে মন্ত্রণালয়ে তার দপ্তরে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। ইতিমধ্যে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রজ্ঞাপন জারির পর সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে মন্ত্রিত্ব হারানোর পর একে একে সব হারাচ্ছেন ডা. মুরাদ। তার নির্বাচনী এলাকা সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকেও ডা. মুরাদকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকেও মুরাদকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। এছাড়া ডা. মুরাদের এমপি পদ থাকার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।
ওদিকে ডা. মুরাদের সর্বশেষ অবস্থান জানা যায়নি। তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারটিতে ফোন করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এড়িয়ে চলছেন গণমাধ্যমকেও। পদত্যাগের বিষয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি না হলেও তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে দুটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। প্রথম স্ট্যাটাসে তিনি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় নারীদের কাছে ক্ষমা চান। দ্বিতীয় স্ট্যাটাসটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চান।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post