বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। সোমবার (১৮ মে) ভোরেই ভারতের মৌসম ভবন জানিয়েছে, ভোরের দিকে বঙ্গোপসাগরের মধ্যভাগে পৌঁছেছে ভয়ঙ্কর এ ঘূর্ণিঝড়। মৌসম ভবনের আপডেট অনুযায়ী, ভোরে ঝড়টি অবস্থান করছিল ওডিশার পারাদ্বীপ থেকে ৮৭০ কিলোমিটার দূরে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চরম আকার ধারণ করবে বলেও জানানো হয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ মোকাবিলায় উপকূলের সুন্দরবন এলাকায় জোরদার প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রশাসন। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকার বিধায়ক, বিডিও, পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতিতে যাতে কোনও ফাঁকফোকর না থাকে সে ব্যাপারে উপকূলের জেলাগুলির কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে নবান্ন। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এরআগে বলা হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার এবং ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের সর্বোচ্চ গতিবেগ ২২৩ কিলোমিটার। এই ঘূর্ণিঝড় সরাসরি সরাসরি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে বলে আগেই পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে থাকতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের নির্দেশনায়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
১৮ মে দুপুর ১২টার তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তাতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
একইসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন রাজ্যের শীর্ষ কর্তারা। সেখানেও ‘আম্ফান’ মোকাবিলায় সবধরনের প্রস্তুতি সেরে রাখছে রাজ্য প্রশাসন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, বকখালি, রায়দিঘি-সহ একাধিক এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ফ্লাড সেন্টারগুলিতে বাসিন্দাদের রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও এলাকার স্কুল, কলেজগুলিতেও যাতে দুর্যোগ নামার আগেই বাসিন্দাদের সরিয়ে ফেলা যায় সে ব্যাপারে জোরদার তৎপরতা চলছে। একইভাবে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বসিরহাটে তৈরি রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে প্রশাসনের তরফে চলছে সতর্কতামূলক প্রচার।
অন্যদিকে, পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, মন্দারমণি, শংকরপুর-সহ সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। দুর্যোগ এলে বাসিন্দাদের সরানোর জায়গা তৈরি রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে। পঞ্চায়েতগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজন হলেই মানুষজনকে ফ্লাড সেন্টারে এনে রাখা হবে।
আরও পড়ুনঃ ওমানে এক রিয়ালে ৪০ কেজি মাছ!
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’-এর মোকাবিলায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার সঙ্গেই করোনার সংক্রমণ রুখতেও একাধিক ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। একসঙ্গে অনেকে থাকলে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেই কারণেই উপকূলের জেলাগুলোর ফ্লাড সেন্টার ও স্কুল-কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাস্ক, স্যানিটাইজার রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে মেডিকেল টিমেরও ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
https://www.youtube.com/watch?v=fEeGhP8sVqE
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post