কারণ থাকলে হয়রানী কারণ না থাকলেও হয়রানী। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের অপর নাম যেন হয়রানী হয়ে গেছে। প্রবাসীকর্মীরা বছরের বছর এই হয়রানীর বিষয়ে কথা বলে যাচ্ছেন, কিন্তু উন্নতি কি হয়েছে? নাকি দিনে দিনে ইমিগ্রেশন আতংক হয়ে উঠছে। একজন সাংবাদিকের ফেসবুক স্ট্যাটাসে সেই কথা জানা যাক।
ঢাকাভিত্তিক টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের রিপোর্টার ও প্রেজেন্টার তাহিয়া রুবাইয়াৎ অপলা তার ফেসবুকে লিখেছেন, ৯ নভেম্বর নেপাল যাচ্ছিলাম। সব কাগজপত্র জমা দেয়ার পর আমার হ্যাসবেন্ডকে ইমিগ্রেশান অফিসার মোস্তফা সাহেবের প্রথম প্রশ্ন, ভিসা কই?
ওনাকে বলা হলো, ভিসা পাসপোর্টের ভেতরেই থাকে। দেখুন, নিশ্চয় পাবেন৷ বুঝলাম, সাধারণ একজন মানুষের কাছ থেকে এ ধরনের উত্তর তিনি আশা করেননি। এরপর তার হয়রানি শুরু। সব কাগজ ঠিকঠাক থাকার পরেও তিনি ইমিগ্রেশন দেবেন না।
তার চেচামেচি শুনে সেখানকার সিনিয়র অফিসার এসে আমাদের ডেকে তার রুমে নিয়ে গেলেন৷ অফিসার আমার হ্যাসবেন্ডকে চিনতে পারলেন। বললেন, আপনাকে তো আমি চিনি। কিছু মনে করবেন না। আমি বলে দিচ্ছি। তিনি আবারও সেই মোস্তফার কাছে পাঠালেন আমাদের। এবার মোস্তফা সাহেব জুয়েলের পাসপোর্টটা কোন কথা ছাড়াই সিল মেরে দিলেন৷ কিন্তু তার তখনো হয়রানি করার মানসিকতা যায় নি। শুরু হলো আমার পালা।
আমার পাসপোর্ট হাতে নিয়ে বললেন, পাসপোর্টে হাজবেন্ডের নাম নাই কেন? আমি খুব শান্তভাবে বললাম পাসপোর্টটা বিয়ের আগে করা, তাই নাম নেই। তিনি তখন বিয়ের কাবিননামা চাইলেন। কার সাথে যাচ্ছি এটা প্রমাণ করতে বললেন।
এবার আসলে আমার ধৈর্য্য হারানোর পালা৷ প্রচন্ড অপমানিত বোধ করছিলাম। তার কাছে জানতে চাইলাম কোন আইনে আছে, একজন বাংলাদেশের ব্যক্তি নিজের পাসপোর্টে বিদেশ ভ্রমণ করতে হলে নিজের কাবিননামা সাথে নিতে হবে? কেউ নিজের পাসপোর্টে নিজে ঘুরতে চাইলে কেন হাজবেন্ডের নাম লাগবে?
এবার মোস্তফা বললেন, কাবিননামা ছাড়া তিনি সিল মারবেন না। এরপর সে উঠে গেলেন চেয়ার ছেড়ে। আমি নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করেই চলেছি। গেলাম তার সিনিয়রের কাছে। আমাদের ৩ জনকে আবারও অফিসে ডেকে নেয়া হলো। এবার সিনিয়র ইমিগ্রেশন অফিসার মোস্তফা সাহেবকে বেশ জোরেই বকাঝকা করলেন, এ ধরনের হয়রানির জন্য। অন্য একজন অফিসারকে দিয়ে আমার ইমিগ্রেশানের কাজ শেষ করালেন।
লাউঞ্জে বসে ভাবছি, আমি চাইলেই এ বিমানবন্দরের কর্তাদের মধ্যে ২/৪ জনকে ডেকে আনতে পারতাম, তার নামে অভিযোগ দিতে পারতাম। এখানে তার অনেক সিনিয়র অফিসার আছেন, যারা আমার খুব পরিচিত। কিন্তু সেটা আমি করিনি। শুধু ভাবছি, একজন সাধারণ মানুষকে কোন লেভেলের হয়রানি করেন এই ইমিগ্রেশান অফিসাররা! নিজেদের এত ছোট ক্ষমতাকেই তারা কিভাবে অপব্যবহারের চেষ্টা করেন?
যারা এ ইমিগ্রেশান দিয়ে পার হোন, তাদের বেশিরভাগ মানুষই অল্প শিক্ষিত, রেমিট্যান্স যোদ্ধা। কখনো কি আমাদের ইমিগ্রেশান সহযোগিতাপূর্ন হবে না! মানুষকে অযথা হয়রানি করে তারা আসলে কি আনন্দ পান??
দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই ঘটনা অনেক কষ্ট দিয়েছে আমাকে। এবার বলি নেপাল এয়ারপোর্টের কথা। নেপালে ইমিগ্রেশন নিয়ে চেক ইন করে ফাইনাল ডিপার্চারে বসলাম। ১ ঘন্টা পরেই ফ্লাইট।
তখন খেয়াল করলাম ব্যাগে মোবাইল নেই। চেক ইন করার পর আর বাইরে বের হওয়ার নিয়ম নেই। তবু বের হলাম। ওদেরকে বললাম আমার ফোন হারিয়েছে। পুরো এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি থেকে শুরু করে পুলিশ কি পরিমাণ একটিভ হয়ে গেলো বলে বুঝানো যাবে না।
আমাকে সাথে সাথে একটা পয়েন্টে নিয়ে স্ক্যানিং করে আমার শুরু থেকে সব একটিভিটি সিসি টিভি ফুটেজ থেকে চেক করা এবং যা যা তাদের দ্বারা সম্ভব সবই করলো। আমি অবাক হয়ে গেলাম! একজন মানুষের সমস্যায় আরেকজন মানুষের এই আন্তরিকতা আর সহযোগিতাটাই তো আমরা খুজি।
ফোন হারানোর দুঃখ ভুলে গেলাম!! এবং আরো অবাক করলো সেখানকার ড্রাইভার। গাড়িতে ভুলে ফোন রেখেই এয়ারপোর্টে নেমে পরেছিলাম। ড্রাইভার চাইলে ফোন ফেরত নাও দিতে পারতো। কিন্তু সে দিয়েছে। দ্রুত স্পিডে এয়ারপোর্টে এসে আমার ফ্লাইটের আগেই ফোন দিয়ে গেছে।
ড্রাইভারের নাম প্রশান্ত। আর এয়ারপোর্টে পুরো সময়টা আমার ফোন খোজার টিমকে যেই পুলিশ অফিসার লিড দিয়েছিলো, তার নামটা মনে করতে পারছি না। শুধু এইটুকু মনের মধ্যে গেথে আছে যে আমার দেশকে আমি ভালোবাসি। শত অত্যাচার আর হয়রানির পরেও!!! কিন্তু শ্রদ্ধা জিনিসটার জন্ম মনে হয় অন্য কোথাও!!!
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post