বাংলাদেশে কাজের অভাব। সংসার টিকিয়ে রাখাই দায়। নতুন বউকে ফেলেও বিদেশ পাড়ি দেন লাখ লাখ বাংলাদেশি যুবক। এজন্য বিক্রি করেন পরিবারের মূল্যবান সম্পত্তি। যাদের অনেকে সফল হলেও বেশিরভাগই ফেরেন ভাগ্যের বিড়ম্বনা নিয়ে। একবার ভাবুন তো, আপনি দেশেই বিদেশের চেয়ে উন্নত চাকরি করছেন। আর এজন্য ব্যয় করতে হচ্ছে না কোনো টাকা।
হ্যাঁ, এমনই দারুণ স্বপ্ন দেখাচ্ছে ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট (বিআইএসডি)। কর্মসংস্থানের ঝুঁকিতে থাকা হাজারো বেকার তরুণ-তরুণীকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে স্বল্প খরচে দেশেই উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আবার দক্ষ হয়ে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নও দেখছেন হত দরিদ্র পরিবার থেকে আসা প্রশিক্ষণার্থীরা।
বেকারত্ব দূর করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে বিআইএসডি। ঢাকার আশকোনায় এর প্রধান কার্যালয়। আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে দেশের প্রত্যেকটি জেলায়। দেশ ও দেশের বাইরে চাহিদা রয়েছে এমন নয়টি কারিগরি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এগুলো হচ্ছে, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ইলেকট্রিক্যাল, এয়ারকন্ডিশনিং, ফুড এন্ড বেভারেজ, রিটেইল সেলস, আইসিটি, সিভিল ট্রেড, হাউজ কিপিং ও আইটি সাপোর্ট টেকনিশিয়ান। তিন মাসের প্রতিটি কোর্সের জন্য নেয়া হয় ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।
করোনাকালে যেসব তরুণ পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েছেন, অথবা কাজ হারিয়েছেন তাদের জন্য ফ্রি-তে প্রশিক্ষণ পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। আবার করোনায় কাজ হারিয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদেরও দক্ষতা উন্নয়নে দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। প্রবাসীর সন্তানদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। এখানকার ট্রেনিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা প্রশিক্ষণ শেষে ব্র্যাক নিজেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।
অর্থাৎ, এই প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিমধ্যে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের প্রায় সবাইকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। যারা এখন কাজ করছেন দেশের বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে। প্রবাসীরা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করার কারণে তাদের সন্তানরা সঠিক পরামর্শ পায় না। আবার প্রবাসী বাবার পাঠানো টাকায় অনেক সন্তানই বিপথগামী হয়ে যায়। এই সন্তানদের নিয়ে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। বিদেশে অবস্থানে অনেকে চেষ্টা করেন ছেলেকে প্রবাসে নেয়ার।
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দেশে বিলাসিতায় বড় হওয়া এসব ছেলে বিদেশের প্রতিকুল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। ফলে আরেক দফা ক্ষতির মুখে পড়েন প্রবাসী বাবা-মা। ব্র্যাকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসীর সন্তানদের জন্য বিআইএসডির প্রশিক্ষণ বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। নামমাত্র খরচে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা দেশেই চাকরি পাবে অথবা চাইলে দক্ষতা নিয়ে বিদেশ গিয়ে উচ্চ বেতনে চাকরি করতে পারবে।
প্রতিবছর বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অন্তত ২০ লাখ তরুণ প্রবেশ করে। এর মধ্যে ৪-৫ লাখ চলে যায় বিদেশে। আর দেশে কাজ পায় মাত্র ৫০ হাজারের মত। অর্থাৎ, ১৫ লাখের বেশি তরুণ বেকার থেকে যায়। টানা দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে দেশে নতুন বেকার হয়েছে আরও কয়েক লাখ।
দেশে ২ কোটি থেকে বেড়ে নতুন দরিদ্র হয়েছে প্রায় চার কোটি। একইসাথে বিদেশে লোক যাওয়ার সংখ্যাও কমেছে। শ্রমবাজারের এই দুর্দিনে প্রতিযোগিতায় টিকতে কারিগরি প্রশিক্ষণ নেয়া ছাড়া বিকল্প দেখছেন না সংশ্লিষ্ট কেউই। এমতাবস্থায় ব্র্যাকের এমন উদ্যোগ যেন প্রবাসীদের জন্য সোনার হরিণ।
প্রশিক্ষণের জন্য যোগাযোগ করুন: 01533011866, 01729070571
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post