বিশ্বকাপ এই প্রথম আয়োজন করছে ওমান। কিন্তু প্রথমে দেশটিতে ক্রিকেট এর কোনো ছিটেফোঁটাও নেই দেশটিতে। বিমানবন্দর থেকে রুই পর্যন্ত একটি বিলবোর্ডও নেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের।
অথচ আসরটি যদি বাংলাদেশে হতো তাহলে প্রতি বড় রাস্তাতেই ব্যানার-ফেস্টুন নিশ্চিত বসে যেত। মাস্কাটের বিশাল ফাঁকা রাস্তায় কোথাও টি-টোয়েন্টি লোগো সংবলিত একটি ব্যানারও নেই। এই শূন্যতায় যেন বিশ্বকাপ নিয়ে ওমানের উৎসাহের শূন্যতাই জানান দিচ্ছে।
তবে ওমান ঘুমিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপ উন্মাদনায় জাগ্রত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। এর উদাহরণ গতকাল প্রথম ম্যাচেই দেখিয়ে দিলো প্রবাসীরা।
ভারত ও ওমান উপসাগরের ওপর দিয়ে ৩ হাজার ৫২৮ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দেশটিতে আসতে হয়। অথচ দূর পরবাসেও ওমানের বিশ্বকাপ রূপ নিয়েছে বাংলাদেশের।
চারপাশে রুক্ষ মরু আর পাথুরে পাহাড়। মাঝখানে কিছু জায়গা জুড়ে সবুজের গালিচা। সেই সবুজ ঘিরে নান্দনিক কিছু স্থাপনা। সব মিলিয়ে উষর ভূমিতেই যেন এক টুকরো স্বর্গোদ্যান। সেই নন্দন কাননে একটু জায়গা পেতে এখন ওমানে চলছে হাহাকার। সুযোগটা মিলবে তো কেবল হাজার তিনেক সৌভাগ্যবানের!
তুমুল এই চাহিদা অবশ্য পুরো ওমানের প্রতিচ্ছবি নয়। এখানকার স্থানীয়দের মধ্যে বিশ্বকাপ কিংবা ক্রিকেট খেলাটার আবেদন সামান্যই। মাসকাট শহরেও বিশ্বকাপের আবহ ততটা চোখে পড়ে না।
স্টেডিয়ামের আশেপাশে গেলেই কেবল কিছুটা বোঝা যায়, এটি বিশ্বকাপের নগরী। তবে প্রবাসী বাংলাদেশি ও উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বুঝা গেল গতকালের ম্যাচে।
ওমানের ন্যাশনাল সেন্টার ফর স্ট্যাটিসটিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন (এনসিএসআই)-এর গত মে মাসের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জনসংখ্যা ৪৫ লাখের একটু বেশি। সেখানে প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ। বিশাল সংখ্যক এই প্রবাসীর বড় একটা অংশ উপমহাদেশের।
এনসিএসআই-এর গত বছরের জুন মাসের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের মধ্যে সংখ্যায় সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশিরা, প্রায় ৬ লাখ। বছর দুয়েক আগেও যা ছিল সাত লাখের ওপরে।
ওই জরিপ অনুযায়ী, প্রবাসী ভারতীয়দের সংখ্যা এখানে ৫ লাখ ৮০ হাজারের ওপর, পাকিস্তানিদের সংখ্যা ২ লাখের মতো। উপমহাদেশের মানুষদের ক্রিকেট উন্মাদনা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার আছে সামান্যই।
ক্রিকেটানন্দে মেতে ওঠার আগে ঘূর্ণিঝড় শাহীনের ধাক্কা এখনও অবশ্য পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা। গত ৩ অক্টোবর ওমানে হানা দেয় এই ঝড়।
রাজধানী মাসকাটে হানা দেওয়ার শঙ্কা থাকলেও পরে গতিপথ বদলে তা ছোবল দেয় উপকূলীয় অঞ্চলে। তাতে প্রাণহানি হয় বেশ কজনের, ক্ষয়ক্ষতি হয় ব্যাপক।
৭ জন বাংলাদেশির মারা যাওয়ার খবর জানা গেছে বলে প্রবাসি বাংলাদেশিদের অনেকের দাবি। ক্ষয়ক্ষতির শিকারও বাংলাদেশিরাই বেশি হয়েছেন।
ঝড়ের পর থেকেই ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। শুক্রবার ছুটির দিনও প্রবাসীদের পাঁচটি সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গেছেন ত্রাণ ও স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করতে। এই ধাক্কা সামাল দিতে আরও অনেক সময় লাগবে, বলছেন প্রবাসীরা।
সেই ক্ষত কিছুটা মুছতে দাওয়াই হয়ে এসেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ক্রিকেট মানচিত্রে অনেকটাই অপরিচিত ওমানে ২০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ হচ্ছে, সেখানে চোখের সামনে খেলতে দেখা যাবে প্রিয় মাতৃভূমির ক্রিকেটারদের, প্রবাসী বাংলাদেশিরা রোমাঞ্চে হাবডুবু খাচ্ছেন।
ওমানে বিশ্বকাপ হচ্ছে, এক সময়ের বাস্তবতা বিবেচনায় এটিই এক বিস্ময়। বছর দশেক আগেও ওমানে তেমন কোনো ক্রিকেট মাঠ ছিল না। এখন সেখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি স্টেডিয়াম আছে।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে সেটির সুযোগ-সুবিধার মান আরও বাড়ানো হয়েছে। মূল স্টেডিয়ামের লাগোয়া মাঠ আছে আরেকটি, যেখানেও স্বীকৃত পর্যায়ের ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব।
সাবেক শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দুলিপ মেন্ডিস বছর দশেক আগে ওমানের ক্রিকেটে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই মূলত ওমানের অগ্রগতির শুরু। সেটা মাঠের ক্রিকেটে যেমন, তেমনি অবকাঠামোগত দিক থেকেও।
কোচ হিসেবে মেন্ডিস যেমন সহায়তা করেছেন ওমানকে সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত শক্ত করায়ও তার দিক-নির্দেশনায় এগিয়ে গেছে ওমানের ক্রিকেট। এখনও তিনি কোচের পাশাপাশি ওমান ক্রিকেটের চিফ ডেভেলপমেন্ট অফিসার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ওমানের ওয়ানডে দিয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে এই ক্রিকেট একাডেমি মাঠের আন্তর্জাতিক অভিষেক। এই ২১ মাসে এই মাঠে ৬২টি (২০ ওয়ানডে ও ৪২ টি-টোয়েন্টি) আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়ে গেছে।
ওমানের ক্রিকেট ও এই মাঠের গ্রহণযোগ্যতাকেই তুলে ধরছে তা। ভারত থেকে বিশ্বকাপ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরে আসার পর তাই সহ-আয়োজক হিসেবে ওমানও পেয়ে গেছে বিশ্বকাপের গৌরব।
তবে যথারীতি সেই গৌরবে স্নান করছে মূলত প্রবাসী ও উপমহাদেশের বংশোদ্ভূতরাই। ওমান জাতীয় দল ভারতীয়-পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত দিয়েই গড়া মূলত।
ওমানের ক্রিকেটে বাংলাদেশিদের সরাসরি সংযোগ সামান্যই। তবে এবার বিশ্বকাপ সুযোগ করে দিচ্ছে সম্পৃক্ততার। ওমানের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে পাওয়া তাদের আপাতত একঘেয়ে প্রবাস জীবনে বাড়তি রঙের ছটা।
অপেক্ষা এখন কেবল মাঠের ক্রিকেটেও উপলক্ষ রঙিন হয়ে ওঠার। গতকাল প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরে বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ শুরু হলেও আগামী ম্যাচে বাংলাদেশ দল ভালো খেলবে এমনটা প্রত্যাশা করছেন ওমান প্রবাসীরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post