এক সময় ধুলা ওড়া মাঠে বিদেশি নেভি ক্রু এবং অফিসারদের হাত ধরেই যেখানে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু, সেখানেই আজ শুরু হলো ক্রিকেট বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় আসর আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বলা হচ্ছে ওমান ক্রিকেটের কথা।
ওমান ক্রিকেট একাডেমি মাঠের দিকে তাকালে অবশ্য সেই ধুলার মাঠের ইতিহাস বাড়িয়ে বলাই মনে হতে পারে। বাংলাদেশি ক্রিকেটার আশরাফুল হক এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে ২০১২ সালের অক্টোবরে এই আল আমেরাত স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেছিলেন।
বাদামি পর্বতমালার কোল ঘেঁসে সবুজের আভিজাত্য ঘেরা আল আমেরাত স্টেডিয়াম, ওমান ক্রিকেটের উন্মোচনে যথাযথ মঞ্চই বলতে হয়। ওমান বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মধ্য দিয়েই ছবি-সুন্দর এই মাঠে ব্যাট বলের লাড়াইটা শুরু হয়েছিল। দুধ সাদা ফ্লাড লাইটের আলোয় উদ্ভাসিত সেদিনের সন্ধ্যাটি যেন ছিল ওমানি ক্রিকেটের ভবিষ্যেতের মতোই উজ্জ্বল, আর ওমানি ক্রিকেট ভক্তদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
মাঠে সবুজ ঘাসের স্বর্গীয় আভা, বেকড্রপের পাহাড়ি ভিউ এ যেনো এক স্বর্গীয় দৃশ্য। যাদের হাত ধরে ওমানের ক্রিকেটের যাত্রা হয়েছিলো, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন শেখ কানাকসি খিমজি। আজ থেকে আনুমানিক ১৫০ বছর আগে ১৮৭০ সালে গুজরাটি ব্যবসায়ী রামদাশ তার পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করে ভাগ্য অন্বেষণে খাদ্য শস্য, চা, মশলা নিয়ে ওমান উপকূলে তার জাহাজ নিয়ে নোঙর করেছিলেন।
ওমানের অর্থনীতিতে তেলের ইতিহাস তখনো শুরু হয়নি। তবে ওমান বন্দর সে সময় খুবই ব্যস্ততম বন্দর হয়ে উঠেছিল। সেই সুযোগ এবং সম্ভাবনাকে ব্যবহার করে রামদাস এবং তার সন্তানরা ওমানের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক এন্টারপ্রাইজ খিমজি রামদাস গ্রুপ গড়ে তোলেন।
ওমানে প্রাথমিক ব্যবসায়িক সাফল্য রামদাস আর তার পরিবারকে স্থানীয় ওমানিদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। এটা ছিল এমন একটা সময় যখন সুলতান সা’ইদ রামদাসের পরিবারের কাছ থেকে ব্যবসায়িক পুঁজি ধার করতেন। সুলতান সা’ইদ হলেন ওমানের লিজেন্ডারি সুলতান, প্রয়াত কাবুজের বাবা। পরবর্তীতে কাবুজ সুলতান হলে রামদাশের নাতি কানাকসি খিমজিকে সন্মান সূচক নাগরিকত্ব দান করেন।
পারিবারিক ভাবে ক্রিকেট অনুরাগী কানাকসি খিমজি হলেন ওমান ক্রিকেট বোর্ডের ফাউন্ডিং চেয়ারম্যান। ১৯৭৯ সালে তার হাত ধরেই ওমান ক্রিকেটের যাত্রা শুরু। আজকের ওমান ক্রিকেটের যে অবয়ব তার জন্য খিমজি’র অবদান সবচেয়ে বেশি।
ওমান ক্রিকেট একাডেমি, আমরাত স্টেডিয়াম তার ভিশনেরই একটি অংশ। ওমান ক্রিকেটে তার এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১১ সালে আইসিসি তাকে লাইফ টাইম সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে আর সুলতান কাবুজের কাছে পেয়েছিলেন ‘শেখ’ উপাধি।
শেখ বা শাইখ সাধারণত একটি মুসলিম উপাধি যা নেতা, শিক্ষক বা সন্মানীত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কানাকসি খিমজিই হচ্ছেন পৃথীবির একমাত্র হিন্দু যার রয়েছে ‘শেখ’ উপাধি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে খিমজি মারা গেলে তার ছেলে পঙ্কজ খিমজি তার স্থলাভিষিক্ত হন। তবে কানাকসি খিমজি মারা যাওয়ার আগেই ওমান ক্রিকেট একাডেমি মাঠ আইসিসি টেস্ট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যায়।
আরব আমিরাতের সাথে এবারের টি-২০ বিশ্বকাপ সহ-আয়োজক হিসেবে থাকছে ওমান, যেখানে দেশটির ক্রিকেটের প্রধান বিজ্ঞাপন হিসেবে থাকবে আল আমরাত স্টেডিয়াম। প্রথম পর্বে গ্রুপ ‘বি’ এর ম্যাচগুলো আয়োজিত হবে এখানে। এই রকম বড় টুর্নামেন্টের সহ-আয়োজক হয়ে যাওয়া ওমানের ব্যাক-রুম প্রফেশনালিজমের বড় উদাহরণ, তবে মাঠের খেলায় ওমান যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই এই টুর্নামেন্টে জায়গা করে নিয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post