চাহিদার তুলনায় ত্রাণ পাচ্ছেনা প্রবাসীরা। ‘ঘূর্ণিঝড় এলাকায় এসে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না অনেকেই। কেমন যেন এক যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক ভুতুড়ি নগরীতে রূপ নিয়েছে ওমানের কিছু অঞ্চল। বহু প্রবাসী ব্যবসায়ী সব হারিয়ে এখন পথে বসেছেন। মানুষ ত্রাণ সহযোগিতা পেতে মুখিয়ে রয়েছেন। বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণগুলো বণ্টন করা হলেও অসহায় হয়ে চেয়ে আছেন প্রবাসীরা।
প্রধান সড়কের কোথাও বিশাল বিশাল গর্ত। আবার কোথাও রাস্তাজুড়ে মাটির স্তূপ। প্রধান সড়ক থেকে গ্রামীণ জনপদের অবস্থাও ভূতুড়ে দৃশ্য। বড় বড় খেজুর বাগান মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। বিশাল মুরগির খামার এখন খোলা মাঠ। বিদ্যুৎ নেই এক সপ্তাহ ধরে।
এমন দৃশ্য ওমানের আল সুইক, বিদিয়া, কাবুরা নামক স্থানের। গত এক সপ্তাহ আগে ঘূর্ণিঝড় ‘শাহীন’ লন্ডভন্ড করে দিয়েছে এ অঞ্চল। হাজার হাজার প্রবাসী নিজের ঘর থেকে কোনো রকমে বের হয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে দিগ্বিদিক ছুটেছেন। এ যাত্রায় অনেকে পানির স্রোতে তলিয়ে গেছেন। এখনো বহু প্রবাসীর সন্ধান মেলেনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তার স্বজনরা সন্ধান চেয়ে পোস্ট করছেন অনেকেই। এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের পাশে জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণের আহ্বান জানিয়েছেন ওমান প্রবাসীরা। এদিকে ওমানে ঘূর্ণিঝড়ে নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে আজ দুই জনের মরদেহ দেশে এসে পৌঁছেছে। রবিবার ওমান থেকে কুমিল্লা জেলার সেলিম হোসেন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোহাম্মাদ খোকনের মরদেহ দেশে এসে পৌছায়।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গত ৩ অক্টোবর ওমানের রেসিল সানাইয়া নামক স্থানে সাইক্লোন শাহিনের তীব্র ঝড়ে দুমরে মুচরে যায় তাদের থাকার ঘর। এ সময় ঘরের ভিতর থাকা অন্যরা নিরাপদে বাহিরে আসতে পারলেও খোকন এবং সেলিম আটকাপড়ে যায়। পরবর্তীতে জরুরী উদ্ধারকারী টিমের সদস্যরা এসে মৃত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় শাহীনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সুইক ও আল-খাবুরা এলাকার সকল স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। এক বিবৃতিতে অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় শাহীনে স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মাথায় রেখেই আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত অত্র অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় শাহীনে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ ও মেরামতের দায়িত্ব পেয়েছে স্ট্রাবাগ ওমান ও আল সারোজ কনস্ট্রাকশন। কোম্পানি দুইটি প্রথমে উত্তর ও দক্ষিণ আল বাতিনাহ প্রদেশে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতের কাজ করবে। এরপর বাতিনা প্রদেশ ছাড়াও ওয়াদি বনি ওমর, ওয়াদি আল জহর, ওয়াদি আল সারমি, ওয়াদি আল কুনুত, ওয়াদি আল হাওয়াসনেহ এবং সোহার প্রদেশের ইয়ানকুল রোডের মেরামতের কাজ করবে।
ঘূর্ণিঝড়ের দেশের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে মন্ত্রী পর্যায়ের নতুন একটি কমিটি গঠন করেছে দেশটির সুলতান হাইতাম বিন তারিক। এই কমিটি মূলত ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্নির্মাণ ও মেরামতসহ ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের সহায়তায় কাজ করবে। অর্থমন্ত্রী সুলতান সেলিম আল হাবসীর নেতৃত্বে নতুন এই কমিটি কাজ করবে।
ঘূর্ণিঝড়ে আল আমরাতে নিখোঁজ হওয়া এক নাগরিকের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছে ন্যাশনাল কমিটি ফর ইমার্জেন্সি কমিটি। এছাড়াও আরো দুই নিখোঁজ প্রবাসীকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো অনেক প্রবাসী নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে এখনো উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে ন্যাশনাল কমিটি ফর ইমার্জেন্সি কমিটি।
এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় শাহীনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য সকল স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করেছে দেশটির সরকার। ত্রাণ ও আশ্রয় খাতের সমন্বয়ক হামুদ মান্ধারী বলেন, “আমরা ব্যক্তি, সমিতি এবং সুশীল সমাজের সংস্থার কাছ থেকে অনুদানের আহ্বান জানাই। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, নির্মাণ সরঞ্জাম, স্যানিটারি উপকরণ, রান্নার সরঞ্জাম জরুরী প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
আল খাবুরা অঞ্চলের মেয়র শেখ ইসহাক বিন সালেম আল রাওয়াহি অত্র অঞ্চলের জাতীয় অভিযানের প্রশংসা করে বলেন, আল খাবুরা এলাকায় বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক এসেছিলেন। তাদের সহযোগীতার প্রশংসা করি। আমরা আশা করি আগামী দুই দিনের মধ্যে দেশের সকল নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়াও এরইমধ্যে দেশের অনেক রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। পরিবহন, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাকি রাস্তা মেরামতের কাজ করছে।”
এদিকে সাইক্লোনের কারণে বন্ধ হওয়া কুরুম পার্কটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। মাস্কাট পৌরসভা জানিয়েছে, দর্শনার্থীদের জন্য পুনরায় খুলে দেওয়া হলো কুরুম প্রাকৃতিক পার্ক। আজ সকাল থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে এই পার্কটি।
তবে শুধুমাত্র প্রধান ফটকের মাধ্যমেই পার্কে প্রবেশ পারবে দর্শনার্থীরা। পার্ক এবং বাগানের অবস্থা আগের মতো তৈরি করার জন্য কাজ করছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। এর আগে, গত ৩ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় শাহীনের ফলে ক্ষয়ক্ষতি ঠিক না করা পর্যন্ত পার্কে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো পার্ক কর্তৃপক্ষ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post