গত দুদিন ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের সুবাদে প্রবাসীরা জানতে পেরেছে বিমান বন্দরে প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষার ফি দেবে বাংলাদেশ সরকার। এটি অবশ্যই একটি যুগান্তকারী ও ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত, যার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই।
এ খবরে মধ্যপ্রাচ্যে সহ অন্যান্য দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছিলো। তবে, এই আনন্দ বেশীক্ষণ ধোপে টেকেনি, যখন বিস্তারিত সংবাদে বলা হলো “কেবল সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীদের এয়ারপোর্টে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ফি সরকার দেবে”!
ঘোষণাটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ গত শনিবার (২-অক্টোবর) সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় দেন। মন্ত্রী জানান, বিমানবন্দরে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীদের করোনার আরটি-পিসিআর টেস্ট ফির এক হাজার ৬০০ টাকা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পরিশোধ করা হবে।
নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও বার্তা, যাতে প্রবাসীরা যারপরনাই আনন্দিত। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেলো, আরব আমিরাতের প্রবাসীরাই কি শুধুমাত্র প্রবাসী, আর বাকিরা কি নিবাসী? দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে অন্যান্য দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের কি কোন ভূমিকা নেই?
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের মোট আহরিত রেমিট্যান্সের প্রায় ৫০% আসে সৌদি আরব প্রবাসীদের থেকে, তারপর আরব আমিরাত ও ওমান থেকে, এরপর উপসাগরীয় অন্যান্য দেশগুলো থেকে। তাহলে কেবল আরব আমিরাত কেন? সবাইকে এই সুবিধার আওতায় শামিল করতে রাষ্ট্র কেন বখিলতা করবে? এটিই এসময়ে প্রবাসীদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং আশ্চর্যজনক ব্যাপার!
মন্ত্রী বলেন, “প্রবাসীরা আমাদের দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়। দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। সরকারও তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সব সময় তৎপর রয়েছে”, এতোটুকু কথা ঠিক আছে, এরপর যখন “সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কর্মীদের বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য ধার্যকৃত এক হাজার ৬০০ টাকা মন্ত্রণালয় থেকে পরিশোধ করা হবে” বলে উল্লেখ করা হয়, তখন মধ্যপ্রাচ্যে সহ অন্যান্য দেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের উদ্রেক লক্ষ্য করা যায়।
মাননীয় মন্ত্রী যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন, সেহেতু ঘোষণাটি সার্বজনীনভাবে সকল প্রবাসীদের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। আরব আমিরাতের প্রবাসীরা যেমন রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখছে ঠিক তেমনি সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর সহ বিদেশে বসবাসরত সকল প্রবাসীদের সেই চাকা ঘুরানোতে সমান হারে অবদান রয়েছে।
প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবী ও অনশনে সাড়া দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে তার কার্যক্রম শুরু হয়। শুধুমাত্র ল্যাব স্থাপনই প্রবাসীদের দাবী থাকলেও সরকার নিজ প্রণোদনায় আরো একধাপ এগিয়ে ল্যাব টেস্ট ফি মওক্বুফ করায় প্রবাসীদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করে অতি দ্রুত যেনো সিদ্ধান্তটিকে “সকল প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের” জন্য উন্মুক্ত করে দেন সেই আশায় আছে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত সকল প্রবাসী। উল্লেখিত প্রস্তাবের আলোকে মন্ত্রীর দেওয়া ঘোষণাটি আমিরাত সহ সকল প্রবাসীদের জন্য সার্বজনীন করে বর্তমান সরকার প্রবাসবান্ধব সরকার, একথার প্রমাণ দেওয়ার সুযোগ এসেছে বলে প্রবাসীরা মনে করেন।
লেখক:
মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম,
জুডিশিয়াল ইন্টারপ্রেটার, ওমান।
ই-মেইল: [email protected]
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post