আরব সাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘শাহিন’ এর কারণে ওমানে দুইদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শনিবার (২-অক্টোবর) ওমান নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে গ্রীষ্ম কালীন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আগামী ৩ ও ৪ অক্টোবর সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে ওমান সরকার। এই দুইদিন দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেসরকারি খাতে কর্মরত শ্রমিকদের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে দেশটির সাহাম অঞ্চলের সমুদ্র উপকুল থেকে নাগরিকদের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সাহামের ওয়ালি কার্যালয়। অত্র অঞ্চলের বেশকিছু স্কুল এবং অ্যাপার্টমেন্ট তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে সরকারিভাবে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অপরদিকে আগামীকাল রবিবার থেকে সালালাহ সিটি সার্ভিস এবং মাসিরাহ শান্নাহ রুট বাদে দেশটির সকল রুটে বাস এবং ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির জাতীয় যাত্রী সেবা প্রতিষ্ঠান মাওয়াসালাত। ওমানের আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ‘শাহিন বর্তমানে মাস্কাট থেকে প্রায় ৫০০ কিমি দূরে অবস্থান করছে।
ওমানের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, “ওমান সাগরে উৎপত্তি হওয়া মৌসুমি ঝড়টি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে দেশটির দক্ষিণ ও উত্তর আশ শারকিয়াহ, মাস্কাট, উত্তর ও দক্ষিণ আল বাতিনাহ, আল দাখিলিয়াহ, আল দাহীরাহ, আল বুরাইমি এবং মুসান্দাম প্রদেশে আঘাত হানবে।
আগামী তিন দিনের মধ্যে ওমানের সকল প্রদেশেই এই ঝড়ের প্রভাব দেখা দিবে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়াসহ দেশে ২০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শাহীন আঘাত হানলে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘন্টায় ৩০-৮০ মাইল বেগে বাতাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলে প্লাবিত হবে।”
ঘূর্ণিঝড় শাহীন বর্তমানে মাস্কাট প্রদেশ থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে এবং ওমানের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসছে বলে জানিয়েছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। আজ এক বিবৃতিতে সিএএ জানিয়েছে, “ন্যাশনাল মাল্টি হ্যাজার্ডস আর্লি ওয়ার্নিং সেন্টারে সাম্প্রতিক স্যাটেলাইটের তথ্য অনুযায়ী মৌসুমি ঝড়টি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ওমানে আঘাত হানবে।
ঝড়টি প্রতিঘন্টায় ১১8 থেকে ১৫১ কিমি বেগে ওমানের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ধারণা করা যাচ্ছে আগামীকাল রবিবার সকাল থেকে মাস্কাট ও উত্তর আল বাতিনা প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সরাসরি প্রভাব ফেলবে ঘূর্ণিঝড় শাহীন।”
এ সময় ২০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত এবং প্রবল ঝড়ের কারণে উত্তর ও দক্ষিণ আল বাতিনাহ, মাস্কাট, আল দাহীরা, আল বুরাইমি এবং আল দখিলিয়াহ, উত্তর ও দক্ষিণ আশ শারকিয়াহ এবং মুসান্দাম অঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলে সাগরের অবস্থা খুবই ভয়াবহ হবে।
এ সময় নিচু এলাকা এবং ওয়াদি পারাপার না হতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। সেইসাথে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত মাছ ধরার জন্য জেলেদের সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় শাহীনের সর্বশেষ আপডেট পেতে ২৪ ঘন্টা কল সেন্টার সক্রিয় করার ঘোষণা দিয়েছে মাস্কাট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ঝড়ে সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ এবং পর্যবেক্ষণ করার সুবিধার জন্য এই সহায়তা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। মাস্কাটে যেকোনো জরুরী সেবা পেতে ১১১১ এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে আরও শক্তিশালী হবে এই ঘূর্ণিঝড়। আর এর প্রভাবে আগামী তিনদিন ভারতের সাত রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটির আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, গুলাব থেকেই সৃষ্ট হয়েছে শাহিনের। ইতিমধ্যেই গত ২৬ সেপ্টেম্বর ওড়িশা ও অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছে গুলাব। তিন জন মারাও গেছেন এই দুর্যোগে।
আর তাই এবার ঘূর্ণিঝড় শাহিনের আগে সতর্কতা (রেইন এলার্ট) জারি করা হয়েছে ভারতের কেরল, কর্ণাটক, গুজরাট, তামিলনাড়ু, সিকিম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে। আগামী তিন দিন শাহিনের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হবে ঐ সাত রাজ্যে। আজ শনিবার সকাল থেকেই অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে শাহিন। তারপর ক্রমশ উত্তর আরব সাগর থেকে পাকিস্তান হয়ে ইরান উপকূলের দিকে সরবে এই ঘূর্ণিঝড়টি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post