ওমানের মুদ্রা নিয়ে অভিনব পন্থায় প্রতারণার ঘটনায় প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, পিবিআই। রাজধানীর উত্তরা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পিবিআইয়ের ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, চক্রটি ২টি দলে বিভক্ত।
একটি দল ব্যাংকের সামনে ওঁৎ পেতে থেকে যারা ব্যাংক থেকে টাকা উঠায় তাদের টার্গেট করে। আরেকটি দল লোভ দেখিয়ে ওমানি মুদ্রার ভুয়া মূল্য দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। চক্রটি ২ বছর ধরে এই প্রতারণা করে আসছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ব্যাংকে গিয়ে ওঁৎ পেতে থেকে টাকা তুলতে আসা গ্রাহকদের অনুসরণ করতো একটি চক্র। টাকা তুলে গ্রাহক ব্যাংকের বাইরে বের হলেই তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতো চক্রের সদস্যরা। তারা বিভিন্ন দেশের কারেন্সি নোট দেখতো। এরপর কৌশলে বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যেত।
চক্রটি ব্যাংক গ্রাহকদের কাছে মাত্র ২২ টাকার ওমানি মুদ্রা ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। এমনই এক ভুক্তভোগীর কাছে ২০টি ওমানের মুদ্রা বিক্রি করে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। অথচ ২০টি ওমানি মুদ্রার মূল্য মাত্র ৪৪০ টাকা।
ওমানের মুদ্রা নিয়ে অভিনব এমন প্রতারণার অভিযোগে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের দলনেতাসহ দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতাররা হলেন- মো. আল আমিন (৩৫) ও মো. শাহজাহান সিরাজ (৪৬)। গতকাল শনিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর উত্তরা-পশ্চিম থানাধীন খালপাড়ে অবস্থিত সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস অফিসের সামনে থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এসময় আল আমিনের কাছ থেকে ১০০ পয়সার ৪০টি ওমানি মুদ্রা ও নগদ ১০ হাজার টাকা ও শাহজাহান সিরাজের কাছ থেকে ১০০ পয়সার ১৮টি ওমানি মুদ্রা ও নগদ ১০ হাজার টাকা ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজি জব্দ করা হয়। রোববার (২৯ আগস্ট) দুপুরে ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের ঢাকা জেলা ইউনিটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম এসব তথ্য জানান।
এসপি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, গত ২৩ আগস্ট মো. লুৎফর রহমান (৪৯) সাভারের বাসা থেকে বের হয়ে তার বড় ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ভাইয়ের কাছ থেকে নগদ দুই লাখ টাকা নিয়ে ফিরছিলেন তিনি। পথে কদমতলী চৌরাস্তার পূর্ব পাশে জাহিদ মার্কেটের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক সিএনজিচালক তাকে স্যার বলে সম্বোধন করে ডাকেন।
‘তিনি ওই সিএনজির কাছে গেলে চালককে তাকে কয়েকটি বিদেশি মুদ্রার নোট দেখিয়ে কোথায় একচেঞ্জ করা যাবে জানতে চান। তখন লুৎফর রহমান ওই সিএনজিচালককে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাঙ্গানো যায় বলে জানান।
আরো পড়ুনঃ
করোনা রোগীকে স্পর্শ করলেই করোনা হয় না
যেভাবে সরকারি অনুদান পাবেন প্রবাসীরা
বিদেশে মারা গেলে ক্ষতিপূরণ আদায় করবেন যেভাবে
এরপর চালক তাকে ২০-২৫টি বিদেশি কারেন্সি দেখায় এবং ভাঙ্গানো হলে কত টাকা পাওয়া যাবে জানতে চায়। তখন তাদের কাছাকাছি অজ্ঞাতনামা আরও দুজন জন ব্যক্তি এসে লুৎফরের পাশে দাঁড়ায়। তাদের একজন ব্যাংকে চাকরি করে এবং অপরজন মানি এক্সচেঞ্জে চাকরি করে বলে পরিচয় দেয়’ যোগ করেন তিনি।
‘ওই দুজন জানায়, বিদেশি কারেন্সিগুলো অনেক দামি এবং এগুলো ওমানি কারেন্সি নোট। মানি এক্সচেঞ্জের দোকানে গিয়ে জমা দিলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। তাদের একজন তখন লুৎফর রহমানকে দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে সিএনজিচালকের কাছ থেকে চারটি নোট কিনে নেন।
তারা লুৎফর রহমানকে বাকি নোটগুলো কেনার জন্য প্রলুব্ধ করেন। তার কথায় বিশ্বাস করে লুৎফর রহমান সিএনজিচালকের কাছ থেকে নগদ দুই লাখ টাকা দিয়ে ২০টি ওমানি কারেন্সি নোট কিনে নেন। তখন সিএনজিচালকসহ অজ্ঞাত ওই দুজন ব্যক্তি সিএনজিতে করে দ্রুত রাজধানীর বাবু বাজারের দিকে চলে যায়।’
‘পরবর্তীতে ভুক্তভোগী লুৎফর রহমান জানতে পারেন সে প্রতারিত হয়েছেন এবং দুই লাখ টাকা খুইয়েছেন। এরপর তিনি ২৭ আগস্ট দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন।’ এসপি খোরশেদ আলম বলেন, ‘আল আমিন সংঘবদ্ধ এ প্রতারক চক্রের দলনেতা।
তারা দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে সহজ-সরল মানুষকে শিকারে পরিণত করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।’ প্রতারণার ঘটনায় বৈদেশিক মুদ্রা আইনে করা মামলাটি পিবিআই-এর ঢাকা জেলা তদন্ত করছে বলেও জানান এসপি খোরশেদ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post