প্রফেসর ড. ইউনুস স্যার নাকি বলেছেন ভারত আমাদের আভ্যন্তীরণ বিষয়ে বেশি নাক গলালে উনারা সেভেন সিস্টার্স কান্ট্রিজ নিয়ে ভালো থাকবেন না। শপথ নেয়ার পর এতটা খোলামেলাভাবে হয়তো আর বলতে পারবেন না। শপথের আগেই মেসেজটা দেয়া ভালো হয়েছে। ভারতের সাধারণ মানুষ অনেক ভালো।
তবে ভারতীয় প্রশাসন কেমন জানি। ওখানে ঢুকতে বা বের হতে খুব বাজে আচরণ করে। বিশেষ করে বাংলাদেশীদের সাথে। এগুলো বন্ধুদেশের মানুষের জন্য জন্য যথাযথ নয়। এমনকি এদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের অফিসগুলোতে স্টাফরাও খুব অশোভন অসংগত আচরণ করেন।
ভারত দেয়ার বেলায় কিপটে, আর নেয়ার বেলায় লজ্জাহীন। ইউরোপে একদেশের ট্রেন আরেক দেশের ভিতর দিয়ে চলে সেটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে। ওদের পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও সম্মান অনেক উঁচু পর্যায়ের। যেখানে সার্ককে পর্যন্ত আপনারা কাজ করতে দেন না, সেখানে কোন বিনিময় ছাড়া একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভিতর দিয়ে ট্রেন চালাতে চান।
কি অদ্ভুত, অসুন্দর ও বিভীষিকাময় আবদার ও প্রচেষ্টা। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিনিময় দিলেও যা বিবেচনার অযোগ্য সেখানে এসব কিভাবে বললেন? এতে আপনাদের প্রতি আমাদের দীর্ঘ লালিত শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতাটুকু উবে যায়।
চানক্যের উত্তরসূরীরা এমন স্থুল প্রস্তাব এবং পরিকল্পনা কেমনে করলেন! নূন্যতম ভদ্রতা থাকলেও একথা বলা যায় না। সম্পর্ক যতই গভীর হোক বন্ধুর স্ত্রীর সাথে একান্তে সময় কাটানোর প্রস্তাব কি দেয়া যায় বন্ধুকে?
বিনা ভোট বা ডামি ভোটের মাধ্যমে আপনাদের প্রতি ইনক্লান্ড একটা সরকার গঠন করে দিয়ে এবং তা টিকিয়ে রেখে এদেশের মানুষের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতি মিনিমাম কার্টেসী দেখানোর প্রয়োজন মনে করলেন না! এটা বিচক্ষণ ও ভদ্রোচিত হয়নি। এগুলো এদেশের মানুষের মনোভাবের প্রতি অবজ্ঞা দেখানোর মত দু:সাহস। এই যে আন্দোলন হলো এটা ভারতসহ সমস্ত পৃথিবীর জন্য একটা একটা মেসেজ। এদেশের মানুষ ন্যায় ও অধিকারের জন্য প্রাণ দিতে আধা মুহূর্তও ভাবে না।
এমন জাতিকে নিয়ে খেলার চেষ্টা আগুন নিয়ে খেলার চেয়েও ভয়ংকর। বুক চিরে ট্রেন চালাতে চাওয়ায় আমরা এদেশের সকল ধর্ম বর্ণের মানুষেরা খুব মাইন্ড করেছি। এতে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। আমাদের মনে আঘাত লেগেছে।আমাদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত হয়েছে।
আমরা এখনো গভীরভাবে বিশ্বাস করতে চাই – আপনারা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান করেন। দয়া করে এগুলো ভবিষ্যতে আর করবেন না। আপনাদের প্রতি প্রেম ভালোবাসা কৃতজ্ঞতা এসব আছে বলেই বলছি। এই দেশকে বিদেশিদের জন্য দোজখ-ই-পুর নিয়ামত বলে অভিহিত করেন বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা। এগুলো ভুলে গেলে চলবে না। এই জাতি কখনো দিল্লির বশ্যতা মানেনি। ইতিহাস আবার পড়ুন। কি সুলতানি আমল! কি মুঘল আমল! ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বাঙালিরাই বেশি রক্ত ঝরিয়েছ। দেখেন না শ্রদ্ধেয় মমতাদির রাজ্য কিভাবে আপনাদের রিজেক্ট করে। অধীন বাঙালিরাই এখনো বশ মানে নাই। আর স্বাধীন বাংলাদেশের বাঙালিদের পোষ মানাবেন, শোষণ করবেন… আর নাই বা বললাম।
ইতিহাস বলে আপনারাই আমাদের আলাদা করে দিয়েছিলেন ।কাজেই নিজেরা সুখ থাকুন। আমাদেরকেও সুখে রাখুন। এতে আমাদের উভয়ের জন্যই মংগল। ইউনুস স্যার যদি ওভাবে বলে থাকেন, তবে তা খুব ভালো হয়েছে। বিয়ের রাতেই বিড়ালটিকে না মারলেও জোর আছাড় দেয়া ভালো। সম্পর্কটা কেমন চান – তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। শহীদ আবু সাঈদ আর মুগ্ধদের দেশের বিদেশনীতি কেমন হওয়া উচিত – তা স্যার নিশ্চয়ই ভালো বুঝবেন এবং নির্ভয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে প্রয়োগ করবেন।
লেখক : মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল, রাঙ্গামাটি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post