বিশ্বের অন্যতম আলোচিত এক জোড়া জুতা, যার মূল্য ৩৩৫ কোটি টাকা। এই অদ্ভুত দামের পেছনে লুকিয়ে আছে এক অনন্য ইতিহাস। জুতা জোড়া সোনা, রুপা কিংবা মূল্যবান কোনো ধাতু দিয়ে তৈরি নয়।
তবে এটি বিখ্যাত ক্লাসিক চলচ্চিত্র ‘দ্য উইজার্ড অব ওজ’-এ অভিনেত্রী জুডি গারল্যান্ডের পরা সেই ঐতিহাসিক লাল জুতো। এই জুতো একবার চুরি হওয়ার পর সেটি উদ্ধার করতে লেগেছিল পুরো ১৩ বছর।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত একটি নিলামে জুতোর এই জোড়া বিক্রি হয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন
১৯৩৯ সালের ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র ‘দ্য উইজার্ড অব ওজ’-এ ১৬ বছর বয়সী জুডি গারল্যান্ড ডরোথি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সিনেমার জুতোটি পরিচিত ‘রুবি স্লিপার’ নামে। যদিও ফ্রাঙ্ক বমের মূল বই ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল উইজার্ড অব ওজ’-এ এই জুতো ছিল রুপার, চলচ্চিত্র নির্মাতারা সেটিকে লাল রঙে রূপান্তর করেন। জুতোটি চুমকি দিয়ে খচিত, যা সিনেমার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে।
ডরোথি যখন এই জুতোর জাদুকরী শক্তি ব্যবহার করে তিনবার গোড়ালি ঠুকে বলে, “বাড়ির মতো আর কিছু নেই,” তখন সে জাদুর দেশ ওজ থেকে ফিরে যায় নিজের ক্যানসাসের বাড়িতে।
জুতো জোড়া ২০০৫ সালে মিনেসোটার গ্র্যান্ড র্যাপিডসে অবস্থিত জুডি গারল্যান্ড মিউজিয়াম থেকে চুরি হয়ে যায়। চোর টেরি জন মার্টিন এক পেশাদার দল নিয়ে কাচের বাক্স ভেঙে এটি চুরি করেন। তার ধারণা ছিল, এই জুতোতে রত্ন বসানো। পরে যখন তিনি জানতে পারেন জুতোটি শুধুই কাচ ও চুমকির সমন্বয়ে তৈরি, তখন হতাশ হয়ে অন্য এক ব্যক্তির কাছে এটি দিয়ে দেন।
এরপর দীর্ঘ ১৩ বছর জুতোর কোনো খোঁজ মেলেনি। অবশেষে ২০১৮ সালে এফবিআই বিশেষ অভিযানে এটি উদ্ধার করে। চুরির অপরাধে ২০২৩ সালে ৭০ বছর বয়সী টেরি দোষ স্বীকার করেন।
জুতোটি সম্প্রতি টেক্সাসের ডালাসে আয়োজিত নিলামে বিক্রি হয়। নিলামকারী প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ অকশন এটিকে ‘হলি গ্রেইল’ অর্থাৎ হলিউড স্মৃতিচিহ্নের পবিত্রতম নিদর্শন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
জুতোর নিলাম কক্ষে ঘোষণার সময় উপস্থিত দর্শকরা করতালির মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কাকতালীয়ভাবে, একই সময়ে চলচ্চিত্রটির প্রিক্যুয়েল ‘উইকেড’-এর মুক্তি, পুরোনো সিনেমাটির প্রতি মানুষের নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করে।
আজও এই লাল জুতো শুধু একটি সামগ্রী নয়; এটি হলিউড ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টিশীলতার শক্তি আর অতীতের মূল্যবোধের প্রতি আমাদের মুগ্ধতা।