মৃত্যুঝুঁকি জেনেও নিজের শরীরে অ্যান্টিবডিকে আরও শক্তিশালী করতে এক অবিশ্বাস্য পদক্ষেপ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টিম ফ্রিড নামের এক ব্যক্তি। গত ১৮ বছর ধরে তিনি ৭০০ বারেরও বেশি বিভিন্ন বিষধর সাপের বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শরীরে প্রবেশ করিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এই বিপজ্জনক প্রক্রিয়ায় তিনি ২০০ বারেরও বেশি সাপের কামড় সহ্য করেছেন।
টিম ফ্রিডের এই ব্যতিক্রমী আত্মোৎসর্গের ফলস্বরূপ তার শরীরে বিরল অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। গবেষকরা দাবি করছেন, এই অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে ১৯টি ভিন্ন প্রজাতির সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব। বিশ্বে সাপের কামড়ে প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়, বিশেষত আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। সময়মতো সঠিক অ্যান্টিভেনম না পাওয়ায় অনেক জীবন অকালে ঝরে যায়। প্রচলিত অ্যান্টিভেনম তৈরির পদ্ধতি হলো প্রতিটি প্রজাতির সাপের জন্য আলাদা ওষুধ তৈরি করা, যা বেশ সময়সাপেক্ষ ও জটিল।
এই পরিস্থিতিতে টিম ফ্রিড সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হেঁটেছেন। তিনি মুম্বাইয়ের গোখরা থেকে শুরু করে আফ্রিকার ব্ল্যাক মাম্বার মতো বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপগুলোর বিষ নিয়মিতভাবে নিজের শরীরে প্রবেশ করিয়েছেন। এই দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার শরীর প্রায় সকল ভয়ানক সাপের বিষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছে।
আরও পড়ুন
এই বিপজ্জনক অভিযানে টিমকে বহুবার কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি একবার পরপর দুটি গোখরার কামড়ে তিনি কোমায়ও চলে গিয়েছিলেন। তবে, তিনি তার লক্ষ্য থেকে পিছপা হননি। গবেষকদের দাবি অনুযায়ী, টিমের শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো এখন ১৯টি ভিন্ন প্রজাতির সাপের বিষকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। পরীক্ষাগারে এই অ্যান্টিবডি মারাত্মক বিষের প্রভাব সফলভাবে প্রতিহত করতে পেরেছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
একসময় ট্রাক মেরামতের কাজ করা টিম ফ্রিড বর্তমানে বিজ্ঞানীদের কাছে ‘মানব অ্যান্টিভেনম’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই গবেষণা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে পারে, তবে সাপের প্রজাতি চিহ্নিত করার জটিলতা ছাড়াই একটিমাত্র ওষুধ ব্যবহার করে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।