কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেন্ট্রি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত সৈনিকদের দেহাবশেষ তুলে দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে জাপান। মূলত এসব সৈনিকদের দেহাবশেষ তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
সমাধি খনন ও দেহাবশেষ উত্তোলনে কাজ করেছেন সাতজন জাপানি প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ, একজন আমেরিকান বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশের একটি ফরেনসিক দল।
ময়নামতিতে সমাধি খুঁড়ে দেহাবশেষ উত্তোলনের কাজে নেতৃত্ব দেয়া লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (অবসরপ্রাপ্ত) জানিয়েছেন মোট চব্বিশটি সমাধির মধ্যে তেইশটিতে কঙ্কাল, মাথার খুলি ও শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়সহ দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। অন্যটিতে কিছু পাওয়া যায়নি।
বিশ্বজুড়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের জন্য সমাধিক্ষেত্র প্রস্তুত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন। এর বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার হিল্লোল সাত্তার বলছেন, ‘উত্তোলন করা দেহাবশেষগুলো জাপানে ফিরিয়ে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দিবে জাপান সরকার।’
তিনি বলেন, ‘জাপানে নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করে পরের প্রজন্মের সাথে মিলিয়ে পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। এরপর তাদের যথাযথ মর্যাদায় সামরিক কায়দায় সেখানে আবার সমাহিত করা হবে।’
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেছেন, বিষয়টিতে তারাও অবগত রয়েছেন। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে বুড়িচং উপজেলায় ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থিত এই ওয়ার সিমেট্রি বা যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র।
সরকারি তথ্য বাতায়নে বলা হয়েছে এটি একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫ হাজার সৈনিক নিহত হন তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে তখনকার বার্মা, ভারতের আসাম ও বাংলাদেশে মোট নয়টি যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিলো। বাংলাদেশে এ ধরনের দুটি সমাধিক্ষেত্র তৈরি হয়েছিলো যার একটি ময়নামতি, আরেকটি চট্টগ্রামে। এর মধ্যে ময়নামতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত তখনকার ভারতীয় ও বৃটিশ সৈন্যদের সমাধিস্থ করা হয়েছিলো। এই সমাধিক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলো কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন।
এই সমাধিক্ষেত্রে মোট ৭৩৬টি কবর আছে বলে জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৫৭ জন যুক্তরাজ্যের। এ ছাড়া তখনকার ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে নিয়ে এলাকা সেই অবিভক্ত ভারতের ১৭৮ ও জাপানের ২৪ জনের সমাধিস্থল এটি। এর বাইরে যাদের সমাধি আছে তাদের মধ্যে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার ১২ জন করে, নিউজিল্যান্ডের চার জন, রোডেশিয়ার (বর্তমানে জিম্বাবুয়ে) তিন জন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ এবং তৎকালীন বার্মা, দক্ষিণ আফ্রিকা, বেলজিয়াম ও পোল্যান্ডের আছেন একজন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপান স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পর অর্থাৎ পঞ্চাশের দশক থেকেই ওই যুদ্ধের সময় বিশ্বজুড়ে নিখোঁজ জাপানি সৈন্যদের খুঁজে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার দাবি উঠতে থাকে।’
বিশেষ করে কনজারভেটিভ পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল কয়েক দশক ধরেই এ দাবিটিকে উপজীব্য করে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলো এবং পরে এটি বেশ জনপ্রিয় দাবি হয়ে উঠলে দৃষ্টি দেয় জাপান সরকার। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে এসে জাপান পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয় যার লক্ষ্য হলো ২০২৪ সালের মধ্যে জাপানের বাইরে থাকা জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ উদ্ধার ও জাপানে ফিরিয়ে নেয়া।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post