পতিত হাসিনা সরকারের আমলে প্রশাসনে বঞ্চিত থাকা কর্মকর্তাদের সচিব,অতিরিক্ত সচিব,যুগ্মসচিব,উপ-সচিব এবং জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
ইতোমধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাড়ে ৭ শতাধিক কর্মকর্তাদের তালিকা বাছাই-বাচাইয়ের কাজ শেষ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বাছাই এর মধ্যে প্রশাসনে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সচিব পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেয়াসহ মাঠ প্রশাসনে ১৮-২২ জন ডিসি প্রত্যাহার করে নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হবে। প্রায় দুই মাস থেকে প্রশাসনে যোগ্য কর্মকর্তাদের খোঁজে কর্মকর্তাদের তালিকা বাছাই করা হচ্ছিলো। আজ রোববার না হলে চলতি সপ্তাহে স্থানীয় সরকারসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে নিয়োগ এবং আট জেলায় শুন্য ডিসি পদে নিয়োগ দেয়া হবে। সব মিলে প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্ত আনতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেবার পর এ পর্যন্ত ২৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদে নতুন মুখ এসেছে। এর মধ্য তিনজনের শুধু দফতর বদল হয়েছে। কেউ কেউ চুক্তিতে এসেছেন। কিছুদিন যাবৎ সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদ শূণ্য রয়েছে। অতিরিক্ত সচিবরাই সেখানে রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে যোগ্যদের সচিব নিয়োগে অধিকতর যাচাই-বাছাই করছে সরকার। অন্যদিকে বিগত সরকারের মতো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে গত সরকারের আমলে বঞ্চিত ও পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও এক মাস যাবৎ মাঠ প্রশাসনে আট জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদ শূণ্য রয়েছে। ফলে মাঠের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জটিলতা বাড়ছে। এর মধ্যে একটি বিভাগেই জেলা সদরসহ চারটি জেলায় ডিসি নেই। সেখানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরাই রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। তাই সচিবের পাশপাশি ডিসি পদে যোগ্য কর্মকর্তাদের পদায়নে যাচাই-বাছাই করছে সরকার। তবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত ছিলেন এমন কয়েকজন সাবেক আমলাকে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া ইনকিলাবকে বলেন,চুক্তি ছাড়া বর্তমান সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে গতিশীল করতে হলে অতীতের বঞ্চিত ও বর্তমান প্রশাসনে যাঁদের নিয়ে দলীয় বিতর্ক নেই-এমন কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের দায়িত্ব দিতে হবে। এটি আরো দ্রুত করতে হবে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, সচিবের কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। এগুলো শিগগিরই পূরণ করা হবে। সেজন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের বাছাই করা হচ্ছে। সচিব পদ বেশি দিন শূন্য রাখা যাবে না। একইভাবে জেলা প্রশাসক পদেও নিয়োগ দেয়া হবে।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালিন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পরই কয়েকটি জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনে নানান বিতর্ক ও সমালোচনা ওঠে। যা পরবর্তীতে বাতিল করতে হয়। এসব জেলায় এখনো ডিসি নিয়োগ না হওয়ায় সেখানে মাঠ প্রশাসনে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। এরপরও যোগ্য কর্মকর্তাদের (উপসচিব) যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে শূণ্য ওইসব জেলায় ডিসি নিয়োগের কাজ করছে সরকার। পাশপাশি সচিব পদেও নিয়োগ নিয়ে কাজ করছে। গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সচিব পদে বড় ধরণের রদবদল আনা হয়। বিগত সরকারের আমলে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া সচিবদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। সেখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব. মূখ্যসচিব, জননিরাপত্তা সচিবসহ কয়েকটি সচিব পদে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। এরপরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে এখনো সচিব পদায়ন করা হয়নি। তবে বিগত সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন এমন কয়েকজন কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমান অন্তর্বকালীন সরকার দায়িত্ব নেবার পর এ পর্যন্ত ২৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদে নতুন মুখ এসেছে। এর মধ্য তিনজনের শুধু দফতর বদল হয়েছে। কেউ কেউ চুক্তিতে এসেছেন। ৮ আগস্টের পর নতুন করে চুক্তিতে সিনিয়র সচিব নিয়োগ দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ড. মো. আব্দুর রশীদ (মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন সম্প্রতি), রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে ড. নাসিমুল গণি, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব পদে এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ড. মো. মোখলেস উর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে মো. এহছানুল হক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে এম এ আকমল হোসেন আজাদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে সিদ্দিক জোবায়ের ও ভুমি মন্ত্রণালয়ে এএসএম সালেহ আহমেদকে। এছাড়াও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মো. হামিদুর রহমান খান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগে ডা. সারোয়ার বারী, সংসদ সচিবালয়ে ড. আনোয়ার উল্ল্যাহ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নাসরীন জাহান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি (পরে বাধ্যতামূলক অবসর), কৃষি মন্ত্রণালয়ে ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মো. জসীম উদ্দিন, বিদ্যুত বিভাগে ফারজানা মমতাজ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ বিভাগে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম,পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপণা বিভাগে মো. মাহবুব হোসেন, সেতু বিভাগে মো. ফাহিমুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে মো. মাসুদুল হাসান, শ্রম ও কর্মসংস্থানে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে শীষ হায়দার চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আবদুল বাকী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে মো. মোকাব্বির হোসেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগ ও এনবির আর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রশাসনে নেতিবাচক চোখেই বরাবর দেখা হয়। বর্তমান সরকারের আমলেও নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতের সরকারগুলোর পথেই হাঁটছে এ সরকারও। প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধই করা যাচ্ছে না। ৮ আগস্টের আগপর্যন্ত বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে প্রশাসনের দুই শীর্ষ পদসহ অন্তত ২৪টি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ছিলেন অবসরে যাওয়া সাবেক আমলারা। এ নিয়ে প্রশাসনে একধরনের অস্বস্তি ছিল। আর বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়েই উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক দিনেই ১১ জন সচিবের চুক্তি বাতিল করা হয়। পরে আরও কয়েকটি পদের চুক্তি বাতিল করে সরকার। এরপর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশাসনে। তাঁরা অধিকাংশই বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের কর্মকর্তা (বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত)। এরপর ধাপে ধাপে আরো কিছু পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, হাসিনা সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ধাপে ধাপে কিছু পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া দরকার। তবে বেশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলে অন্তত তিন থেকে পাঁচজন কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হন। সে গুলো বিবেচনায় সরকারকে রাখতে হবে। এতে প্রশাসনিক কাজকর্মে স্থবিরতা নেমে না আসে। ডিসি ছাড়াই চলছে আট জেলা: কোনো ডিসি ছাড়াই চলছে দেশের আট জেলা। গত ১০ সেপ্টেম্বর ডিসি হিসেবে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার পর ১১ সেপ্টেম্বর তাঁদের মধ্যে আটজনের নিয়োগ বাতিল করায় এসব জেলার ডিসির পদ ফাঁকা হয়ে যায়। কাউকে পদায়ন না করায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরাই রুটিন কাজ করছেন। জেলা গুলো হলো রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও দিনাজপুর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পি কে এম এনামুল করিমকে ৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার আগে যেসব ড়িসিকে মাঠ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যাদের এক বছর ও ৬ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। প্রত্যাহার করা ৫৯ জন ডিসির মধ্যে বেশ কয়েকজন বিএনপি পন্থী ছিলেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত মো. আব্দুর রউফ ইনকিলাবকে বলেন, দ্রুত পদায়ন দিতে তারা চেষ্টা করছেন। আপাতত ডিসি নিয়োগে নতুন করে আর কোনো ফিট লিস্ট করা হবে না। ডিসি নিয়োগের যে ফিট লিস্ট রয়েছে, সেখান থেকেই আট জেলায় ডিসি পদায়ন করা হবে। তবে প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। তা কয়েকদিনের মধ্যে দেখতে পাবেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post