জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। তার সফরকে ঘিরে এক উৎসবমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তিনি চার দিনের সফরকালে খুবই কর্মব্যস্ত সময় পার করেছেন। তিনি বৈঠক করেছেন একের পর এক রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে। বৈঠক করেন বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে। ঘরোয়া পরিবেশে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সবাই দেশই বাংলাদেশের পাশে থাকলে চেয়েছে। বাংলাদেশের জন্য যা প্রয়োজন সবই তারা দিবে বলে আশ্বাস্ত করেছে। তাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়নি।
জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভাষণে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে যুবসমাজ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে এবং নতুন প্রজন্ম এজন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। উদারনীতি, বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর মানুষের গভীর বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়। ১৯৭১ সালে যে মূল্যবোধ বুকে ধারণ করে গণমানুষ যুদ্ধ করেছিল, সেই মূল্যবোধ বহু বছর পর এ দেশের জেনারেশন জেড (জেন-জি) নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছে। সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ‘মনসুন অভ্যুত্থান’ আখ্যায়িত করে তিনি আরও বলেন, এই অভ্যুত্থান বিশ্বে ন্যায়বিচারের অনুপ্রেরণা জোগাবে।
দীর্ঘ তিন দশক পর বাংলাদেশ সরকারপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈঠকের খবরে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিরল এই বৈঠককে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বলে জানিয়েছে প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন একান্ত বৈঠক এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মধ্যে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত বৈঠক নতুন সরকারের জন্য শুভ সূচনা হিসেবে বিবেচনা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলকই’ থাকবে। এই সম্পর্ক নিয়ে আগে থেকে কিছু ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না। তেমন ভাবনা কারও ভাবা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
নিউইয়র্কে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা আলাপচারিতায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক নিয়ে আগাম কোনো ধারণায় উপনীত না হওয়ার অনুরোধ আমি সবাইকে করব। বিষয়টা এমন নয় যে ভারত তার সব প্রতিবেশী দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এভাবে চলেও না। এমনটা হয়ও না। এটা শুধু আমাদের (ভারত) নয়, সবার জন্য সমান সত্য।
বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের সবচেয়ে সফলতম সফর ছিল এবার বলেও মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। জাতিসংঘে ড. ইউনূসের ভাষণ মাইলফলক।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। সফরের সময় প্রধান উপদেষ্টার ব্যাপক কর্ম-তৎপরতা বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশ্বের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং অংশীদারিত্ব এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে (যুক্তরাষ্ট্রের সময় বেলা ১১টা) নিউ ইয়র্কে দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শুরুর আগে জো বাইডেন ও ড. ইউনূস হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং কিছুটা সময় আলাপচারিতা করেন।
বৈঠকে ড. ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা এবং বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা জো বাইডেনকে জানান। ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, দেশ পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেকোনও প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের একটি হোটেলে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (ইউএনজিএ)’র অধিবেশনের ফাঁকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সদর দফতরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
২৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুইজ্জু। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। নিউইয়র্কে হিলটন হোটেলে Clinton Global Initiative- সভায় বক্তৃতা করেন ড. ইউনূস। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন উপস্থিত ছিলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। দেশের মধ্যে জ্বালানি, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার সঙ্গে বৈঠক করেন ড. ইউনূস। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান বৈঠক করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাথে বৈঠক করেছেন।
বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের অংশীদারত্ব চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, তাঁর সরকারের নেওয়া বহুমুখী সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তাঁরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আপনাদের কথা শুনতে এসেছি এবং আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশ কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ চাই। আমাদের এই নতুন যাত্রায় আপনাদের অংশীদারত্ব চাই।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post